ইতিমধ্যেই অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে (Banglaesh) জারি হয়েছে কারফিউ। এবার তার প্রভাব সরাসরি পড়ল ভারত-বাংলাদেশ (Banglaesh) আর্ন্তদেশীয় বাণিজ্যের ওপরেও। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের (Banglaesh) পরিস্থিতি প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। তবুও টিমটিম করে চলছিল সীমান্ত বাণিজ্য। আর এবার শনিবার থেকে এই খুঁড়িয়ে চলা আমদানি-রপ্তানিতেও অনির্দিষ্টকালের জন্য দরজা বন্ধ হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হবার আগে থেকেই ভারত থেকে পণ্য সরবরাহের বেশ কিছুটা কমেই গিয়েছিল। গত বেশ কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আবহাওয়া চলছে। সীমান্ত বাণিজ্যে তার প্রভাব বেশ ভালই পড়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু গত বেশ কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যে ছটার পর বাংলাদেশে ঢোকার পণ্যবাহী গাড়িগুলির পাস ইস্যু করা হচ্ছিল না বাংলাদেশের তরফ থেকে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যবাহী গাড়ি বাংলাদেশে ঢোকার পরিমাণ কয়েক দিন ধরেই কমে গিয়েছিল। শেষবারের জন্য মাত্র ৩৪ টি পণ্যবাহী লরি বাংলাদেশে ঢুকেছিল। তারপরেই আপাতত বন্ধ লরি চলাচল। ২০ তারিখ, শনিবার সকালেই ভারতের দিক থেকে গাড়ি ঢোকা শুরু হওয়ার পরপরই বিভিন্ন ক্লিয়ারিং এজেন্ট এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষদের মধ্যে একটি বৈঠক করে আপাতত বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে এবার বড় পদক্ষেপ ভারতের
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ইন্টারনেট পরিষেবা ঠিকঠাক মতো মিলছে না। ফলে চালান সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র অনলাইনে পাঠানো বা প্রিন্ট আউট পুরোপুরি বন্ধই বলা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা করতে প্রচন্ড অসুবিধা হচ্ছে এমনটাই দাবি বিভিন্ন এক্সপোর্টারদের। তাই প্রথমে পেট্রাপোল এবং পরে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেন এক্সপোর্ট এজেন্টরা। তবে এই মুহূর্তে সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রচুর পণ্যবাহী ট্রাক। আচমকা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সেই সমস্ত পণ্য বিশেষ করে কাঁচামালগুলির কি অবস্থা হবে তা নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এই মুহূর্তে তাই বিপুল লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ।
পেট্রাপোলের কাস্টমস বিভাগের সাথে যুক্ত বিভিন্ন লোকজনদের মতে গত সপ্তাহখানেক ধরেই দিনে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা করে বন্ধ ছিল লরি চলাচল। ফলে যেখানে গড়ে প্রায় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫৫০ করে ট্রাক সীমান্ত পারাপার করে, সেখানে সেটা এক ধাক্কায় কমে ৩০০ তে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আর এবার কারফিউ পরিস্থিতিতে, বাণিজ্য বন্ধ হওয়াটা অবশ্যম্ভবীই ছিল বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ একেতেই বাংলাদেশ জুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকটও দেখা দেবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ফলে যে সমস্ত কাঁচামাল, ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত ঢোকে, একটা গাড়িতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তার মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে অনেক ট্রাকচালকই বাংলাদেশ যেতে গররাজি ছিলেন। এমত পরিস্থিতিতে তাই আপাতত সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে।
অপরদিকে সীমান্ত দিয়ে যাতায়াতেও তীব্র প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্বিগ্ন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সড়কপথে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাদেরকে বিভিন্ন সীমান্তে পৌঁছতে প্রবল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অপরদিকে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল এই মুহূর্তে বন্ধ। বিমান ব্যবস্থার অবস্থায় একই রকম। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ যেন এখন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত অবস্থাতে হয়েছে।
জামাত ইন্ধনে বাংলাদেশের জেল দখল, পলাতক আনসার আল ইসলাম জঙ্গিরা
এরকম অবস্থায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বিটিং রিট্রিটও বন্ধ রাখা হয়েছে। সীমান্তে বিকেল বেলায় দুই দেশের পতাকা নামানোর সময় কুচকাওয়াজের রেওয়াজ রয়েছে, তা আগামী রবিবার অবধি বন্ধ থাকবে এমনটাই জানা যাচ্ছে। আগামী রবিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কারফিউর ব্যাপারে আবারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন সীমান্তে আটকে থাকা মানুষজন, ব্যবসায়ী এবং লরি চালকরা আপাতত রবিবার হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।