বাংলাদেশের (Bangladesh) অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় পর্দার মৃণাল সেন। খ্যাতনামা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের (Bangladesh) ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে। আর এই বিষয়ে তিনি সরাসরি অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন রাজনীতির (Bangladesh) দিকেই। তাঁর কাতর আবেদন ‘নোংরা রাজনীতি করে এই রক্তপাত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ হোক’।
এখনো অবধি শতাধিক মৃত্যু ঘটেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) এই চাকরির কোটাবিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই পড়ুয়া। চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশের কোটার বিরোধিতা করেছে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা যেন এখন তীব্র সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। একের পর এক সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ অফিসারদের বেধড়ক মারধর, এমনকি প্রাক্তন মেয়রের উপরে প্রাণঘাতী হামলা, তাঁর আধিকারিকের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আন্দোলনের হিংস্রতা যেন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতারা রীতিমতো প্রাণভয়ে আত্মগোপন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে চঞ্চলের বক্তব্যে নোংরা রাজনীতিকে দোষারোপ নিঃসন্দেহেই অন্য বার্তা বহন করছে।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে এবার বড় পদক্ষেপ ভারতের
কাঁটাতারের এপার ওপার দুই বাংলাতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে চঞ্চল প্রশংসা পেয়েছেন অঢেল। কিন্তু এবার সেই চঞ্চলের গলাতেই সমালোচনার সুর রাজনীতি নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষে থাকার চঞ্চলপ্রেমীদের কাছেও চঞ্চলের এই বার্তা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। চঞ্চল তার বক্তব্যে বলেছেন, দিনকুড়ি আগে তিনি আমেরিকা গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ছাড়ার সময়কার অবস্থা, এবং কুড়ি দিন পরে ফিরে এসেছি তিনি যে বাংলাদেশকে দেখছেন তার মধ্যে কোন মিলই নেই।
এত রক্তক্ষয়, মৃত্যু, হিংসা দেখে উদ্বিগ্ন চঞ্চলের একটাই প্রশ্ন, হিংসা এড়াবার কোন রাস্তাই কি ছিল না? তবে পড়ুয়াদের উপরেও কেন গুলি চালাতে বাধ্য হল পুলিশ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই খ্যাতনামা অভিনেতা। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে চঞ্চল লিখছেন, যা ঘটে গেল তা মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক এবং সভ্যতা বহির্ভূত!’ তার প্রশ্ন রাজনীতি তিনি না বুঝলেও, এইটুকু প্রশ্ন তিনি করতেই পারেন যে এতগুলো তরুণ তাজা প্রাণের অকালে ঝরে যাওয়ার দায় কে নেবে? মৃত পড়ুয়াদের পরিবারের হয়ে তাঁর প্রশ্ন ‘যে মায়ের বুক খালি হলো তার আর্তনাদ কে শুনবে? হায়রে দুর্ভাগা দেশ! নোংরা রাজনীতির নামে এই রক্তপাত বন্ধ হোক!’
ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ! সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণভয়ে ভারতে ফিরছেন পড়ুয়ারা
তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যে নিছক ছাত্র বিক্ষোভ নয় তা মানছেন একপ্রকার সকলেই। অনেকের মতেই বিভিন্ন উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের ইন্ধনেই এরকম অরাজক পরিস্থিতি চলছে বাংলাদেশ জুড়ে। অনেকের মতেই কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে আদতে শেখ হাসিনার সরকারকে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন জামাত ইসলামের মত মৌলবাদী সংগঠনগুলি। ‘নোংরা রাজনীতি’ শব্দবন্ধের ব্যবহার চঞ্চল চৌধুরী কি তাহলে সেই মৌলবাদীদের দিকে অভিযোগ তোলার জন্যই ব্যবহার করলেন? অনেকের মতে সেটাই।
তবে শুধু চঞ্চল চৌধুরীরই নয়, প্রখ্যাত অভিনেতা আরফান নিশো, অপূর্বরাও মুখ খুলেছেন হিংসার বিরুদ্ধে। পরিষ্কার বক্তব্য যে রক্তপাত হিংসা হানাহানি করে কোন সমাধান আসে না। সমস্যার সমাধানের রাস্তা এটা নয়। শান্তিপূর্ণ পথে আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। এমনটাই দাবি দুই তরুণ অভিনেতার।
অনেকেই বাংলাদেশের এই তরুণ অভিনেতা মহলের বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত রাজর্ষির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। রাজর্ষি নাটকের অন্যতম চরিত্র জয়সিংহের প্রশ্ন ছিল ‘এত রক্ত কেন?’ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের বেশিরভাগেরই মানসিক অবস্থা এখন এই জয়সিংহের মতই। এত রক্ত কেন সোনার বাংলা জুড়ে?
এই মুহূর্তে কার্ফু চলছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে, আগামী রবিবার কার্ফু নিয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেবে হাসিনা সরকার। আলোচনার টেবিলে আন্দোলনকারীদের যে আহ্বান তাঁরা করেছিলেন তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই মুহূর্তে সেনা-কার্ফু ছাড়া সোনার বাংলাকে শান্ত করার কোনও রাস্তাই আর ছিল না হাসিনা সরকারের কাছে।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের মনের অন্তরে লুকিয়ে থাকা আদিম হিংস্রতায় যতক্ষণ না চিরকালীন বনধ ঘোষিত হচ্ছে, ততদিন অবধি এই হিংস্র রক্তপাত বন্ধ সম্ভব নয় বলেই মানছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল। তাই তাদের এখন একটাই আর্তি – বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, শান্ত হোক, শান্ত হোক, শান্ত হোক, হে ভগবান।