ব্যালটে লাল গোলাপ ঝড়ের ইঙ্গিত। ব্রিটেনের রাজনীতিতে চোখ ধাঁধানো জয়ের পথে দেশটির মধ্য-বামপন্থীরা। দেড় দশক পর ফের ব্রিটেনের ক্ষমতায় আসতে চলেছে দেশটির শতবর্ষী পুরাতন শ্রমিক দল তথা লেবার পার্টি এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে (UK Election 2024) ভোটপূর্ববর্তী সমীক্ষা। লাল গোলাপ ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রতীক।
সমীক্ষাতে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে বৃহত্তম বাংলাভাষীদের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে লেবার পার্টির দিকেই। ক্ষমতা থেকে সরে যাচ্ছে রক্ষণশীল দল তথা কনজারভেটিভ পার্টি।সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনেক বেশি আসন নিয়ে লেবার পার্টি সরকার গড়বে। সমীক্ষা মিললে ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পদত্যাগ সময়ের অপেক্ষা বলেই ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে।
ব্রিটেনের ভোটের রাজনীতিতে একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির ভোট৷ অন্তত ১৬ লাখ বাংলাদেশি মানুষ বসবাস করেন। সম্প্রতি কেয়ার ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটে আরো অন্তত কয়েক হাজার বাংলাদেশি ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন। ৪ জুলাই দেশটির জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট কোনদিকে যাচ্ছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে সমীক্ষায় বলা হচ্ছে এই বাংলাভাষী ভোটারদের সিংহভাগের ভোট পড়তে চলেছে লেবার পার্টির অনুকূলে।
সমীক্ষায় উঠে আসছে, ভোটারদের মধ্যে সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এই ভোটারদের মধ্যে বাংলাভাষী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থনে বলীয়ান ব্রিটেনের লেবার পার্টি। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্রিটেন প্রবাসী ইউনিটগুলি লেবার পার্টির ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৌত্রী টিউলিপ সিদ্দিক অত্যন্ত হেভিওয়েট প্রার্থী। তিনি মন্ত্রী হতে পারেন। টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা। আর মাসি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তবে ভোটের আগে লেবার পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্যার কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে বিতর্কে জড়ান। পরে ক্ষমা চেয়ে তিনি পরিস্থিতি নরম করার চেষ্টা করেন।
ব্রিটেনের সংসদ নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়ছেন। লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সর্বোচ্চ ৮ জন। এই ৩৪ প্রার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই এবার প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এদের অনেকে গাজা সংকটে লেবার পার্টির অবস্থানের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নির্দল প্রার্থী। ২০১৫ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ১১ জন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। ২০১৯ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয় ১৪ জন্য। এবার এক লাফে ৩৪ জন!
৯ মহিলাসহ মোট ৩৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, আপসানা বেগমসহ লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন আটজন। সমীক্ষা বলছে, এদের প্রত্যেকের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে প্রথমবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সাংসদরা।
বিবিসি জানাচ্ছে হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের ভোটে কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ মোট ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। মোট ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।