‘কবচ’ থাকলেই বেঁচে যেত কাঞ্চনজঙ্ঘা? জানুন কি এই ‘কবচ’!

ইতিমধ্যেই আমরা অনেকেই জেনে গিয়েছি, লাইনে কবচ সিস্টেম না থাকায় ঠেকানো যায়নি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কি এই কবচ?…

Rahul Gandhi to give up wayanad seat keep Raebareli

short-samachar

ইতিমধ্যেই আমরা অনেকেই জেনে গিয়েছি, লাইনে কবচ সিস্টেম না থাকায় ঠেকানো যায়নি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কি এই কবচ? কি এমন জিনিস এই কবচ, যা থাকলে এরকম দুর্ঘটনা আটকে যেত? আর যদি কবচের এত বড় ক্ষমতাই থাকত, তাহলে কেন রেলমন্ত্রক এই কবচ সিস্টেমকে রেললাইনে ব্যবহার করছে না?

   

সাধারণত কবচ বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোন বিশেষ মন্ত্রপূত জিনিস বা মাদুলি । যা আমাদেরকে যেকোনও বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে এরকমই বিশ্বাস করি আমরা অনেকেই। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই রেলের এই সুরক্ষা ডিভাইসের নামকরণ হয়েছে ‘কবচ’। এবার জেনে নেওয়া যাক, রেলের এই কবচের ক্ষমতার খুঁটিনাটি।

কবচ হল একটি সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরী রেলের নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা (ATP) সিস্টেম, যা তিনটি ভারতীয় সংস্থার সাথে রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন বা RSCO-এর সম্মিলিত ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে।

ব্যর্থ ‘বন্দে-ভারতের’ বলি কাঞ্চনজঙ্ঘা! রেলের তুঘলকি মানসিকতাতেই আবার মৃত্যুমিছিল?

সাধারণত ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করেন ট্রেনের চালকই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চালকদের সিগন্যালিং সিস্টেম থেকে পাঠানো নির্দেশে ভুলভ্রান্তি ঘটতেই পারে। আবার অনেকক্ষেত্রে চালকের মন:সংযোগ হারিয়ে যাওয়ার কারণে ঘটা বিপদ এড়াতে এবং কম দৃশ্যমানতার সময়েও যাতে ট্রেনগুলি নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে এই সিস্টেম। এমনকি ড্রাইভার সময়মতো ব্রেক কষতে ব্যর্থ হলে, কবচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেক কষে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম।

এঈ সিস্টেমের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ RFID বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ, যেগুলিকে ট্র্যাক এবং স্টেশন ইয়ার্ডে স্থাপন করা হয় । নির্দিষ্ট ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট ট্র্যাকগুলি সনাক্ত করতে এবং ট্রেনের সঠিক দিকনির্দেশ করার জন্য এগুলিকে বসানো হয়। সিস্টেমটি নির্দিষ্ট সময়ে সক্রিয় হয়ে গেলে, সেই মুহূর্তে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত ট্রেন থেমে যাবে যাতে নির্দিষ্ট ট্র্যাকে একটি নির্দিষ্ট ট্রেনকেই নিরাপদে যেতে দেওয়া যায়।

Indians Avoid News: খবরে অনীহা ৩৯ শতাংশ ভারতবাসীর, জানুন কারণ

অন ​​বোর্ড ডিসপ্লে অফ সিগন্যাল অ্যাসপেক্ট (OBDSA) খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকলেও লোকো পাইলটদের সিগন্যাল দেখতে সাহায্য করে। এমনিতে স্বাভাবিক অবস্থায় লোকো পাইলটরা সিগন্যাল সনাক্ত করতে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে নেন।

একটি ‘রেড সিগন্যাল’ এর কাছে যাওয়ার সময় কবচ সিস্টেম লোকো পাইলটকে একটি সংকেত পাঠায় এবং সংকেতটি যে কোনও সংঘর্ষ এড়াবার জন্য প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয় ব্রেক প্রয়োগ করে। ২০২২ সালে, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছিলেন যে তিনি নিজে নাকি কবচ সিস্টেম পরীক্ষা করেছেন। তবে এই সিস্টেমের ইনস্টলেশন এবং এর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ খুবই খরচসাপেক্ষ বলে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী।

রেলওয়ে সূত্রে খবর, আগামী বছরের মধ্যে ৬০০০ কিলোমিটারের বেশি ট্র্যাক কভার করা সহ দিল্লি-গুয়াহাটি রুটকে কবচ সিস্টেমের মধ্যে আনার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক। বাংলায় কবচ সুরক্ষিত ৩০০০ কিলোমিটার ট্র্যাক থাকবে বলে জানা গিয়েছে। সিস্টেমটি দিল্লি-হাওড়া রুটেই মূলত প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু তার আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রেল সুরক্ষার সবথেকে বড় গোলমালকেই। তাই এই মুহূর্তে যত খরচই হোক না কেন, দেশের সমস্ত ট্র্যাকেই কবচের প্রয়োজন বলে মানছেন খোদ রেল বিশেষজ্ঞরাই!