মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য ভারত সেবাশ্রম সংঘের অবমাননা হয়েছে। ফলে বেলডাঙার সংঘের প্রধান কার্তিক মহারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি নোটিস দিয়েছেন। চারদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন ওই সন্ন্যাসী। না হলেই আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এই আইনি যুদ্ধের মাঝেও থামতে নারাজ মমতা। উল্টে আরও চড়া সুরে কার্তিক মহারাজকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ বললেন, মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরে হিংসায় উসকানির নেপথ্যে ছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের কার্তিক মহারাজ।
সোমবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে ওন্দায় জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানেই মমতা বলেন, “আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই। আমি কেন একটা প্রতিষ্ঠানের বিরোধী হব? অসম্মানই বা কেন করব? আমি তো কয়েকদিন আগেও মহারাজ অসুস্থ ছিলেন তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি বলেছি দু’একজনের কথা। গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রম আছে। ওরা এত ভালো ওরা সত্যি আমাকে খুব ভালোবাসে ও মানুষের কাজ করে। আমি একটি লোকের নাম করে বলেছিলাম তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ। তিনি আমাদের এজেন্ট বসতে দেয়নি। ভোটের ২ দিন আগে মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গাটা করিয়েছিলেন তার হোতা ছিলেন উনি। আমি সেই জন্য বলেছিলাম। এবং বলে যাব। উনি বিজেপি করেন।”
PM Modi: ‘মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই’, ভোট দিয়ে বললেন রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত
মমতার সংযোজন, “মুর্শিদাবাদে রেজিনগরে ভোটের ২ দিন আগে যেখানে দাঙ্গা হয়েছিল সেখানে ওনার আশ্রম। উনি আশ্রম চালান। আমার কোনও আপত্তি নেই। আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম ওখানে তৃণমূলের এজেন্ট নেই কেন? বলল, কার্তিক মহারাজ বলেছে তৃণমূলের এজেন্টকে আমরা বসতে দেব না। ওখানে কিছু লোককে ক্ষেপিয়েছে যারা ছানার ব্যবসায়ী। খবর আমিও রাখি।”
এরপরই ওই মঞ্চ থেকেই সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজকে বিজেপি করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “এলাকায় এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে আপনি বিজেপি করে বেড়ান। আমি বলছি আপনি করুন। কিন্তু বিজেপির চিহ্নটা বুকে লাগিয়ে রেখে করুন। লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? আমি যেটা বলি, আমি প্রমাণ ছাড়া বলি না।”
Locket VS Asima: উত্তপ্ত ধনেখালি, ‘চোরে’র পাল্টা ‘ডাকাত’! সম্মুখ সমরে লকেট-অসীমা
হুঁশিয়ারির সুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “আমাদের রাজ্য বাংলা। আর তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসবে না। আর বসতে দেবে না। ভোটের ২ দিন আগে দাঙ্গা করিয়ে দেবে তাদের আমি ছেড়ে দেব? মন্দির ভাঙলে ছেড়ে দেওয়া উচিত? না মসজিদ ভাঙলে ছেড়ে দেওয়া উচিত?”
ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ ও আসানসোলের রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজনীতির অভিযোগ তোলায় সোচ্চার বিজেপি। বাংলায় প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হিন্দু বিরোধী’ বলে দেগে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সরব ভারত সেবাশ্রম সংঘও। ভোট আবহে য়া অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূলের। তাই এ দিন মমতাকে বলতে শোনা যায়, “আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে কেন হব? এই তো সেদিনও এক মহারাজ অসুস্থ হয়েছিলেন। আমি গিয়েছি। ওঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। বিবেকানন্দের বাড়ি আমি রক্ষা করেছি। সারদা মায়ের বাড়ি আমি রক্ষা করেছি। ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি আমি বাঁচিয়েছি। কিন্তু সবাই একরকম নয়। আমি সেটাই বলেছি।”
কার্তিক মহারাজকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সোমবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, “কার্তিক মহারাজ কে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল করে জানেন। আর মুর্শিদাবাদে যে দাঙ্গা হবে সেটা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে থেকে বলে দিয়েছিলেন। ডিআইজি মুকেশ কুমারকে যখন নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দিয়েছিল তখন উনি বলেছিলেন, এর পর দাঙ্গা হলে রাজ্য সরকারের দায় নয়। রেজিনগরের দাঙ্গা তৃণমূলই করিয়েছেন। কারণ উনি ভোটের মেরুকরণ করতে চেয়েছিলেন। যাতে কংগ্রেসকে হারানো যায়।”