বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে বিচারপতি গাঙ্গুলি। কলকাতা হাইকোর্টে দুই বিচারপতির সংঘাত! মেডিকেল ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ সেই এফআইআর খারিজের নির্দেশ দেয়। শুরু হয় সংঘাত।
বিচারপতি সেনকে তোপ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গাপাধ্যায়ের। তিনি বলেন কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনও নির্দেশ দিলেই স্থগিতাদেশ। বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি মামলায় এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। সেই এফআইআর খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আদলত থেকে মামলা সংক্রান্ত যা যা নথি নিয়েছে সিবিআই, সেগুলি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে এদিন বিচারপতি ও এজি-র মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে আদালত সূত্রে খবর। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে হাইকোর্টের আরেক বিচারপতির স্বামীকে সিআইডি তলব সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসে বচসায়।
মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ ইতিমধ্যেই খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মেডিক্যাল কলেজে ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। সেই মামলায় পুলিশের উপর ভরসা না রেখে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। সেই নির্দেশ খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ।
এজলাসে বসেই বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি বলেন, বিচারপতি সৌমেন সেনের এই রায় রাজনৈতিক মদতপুষ্ট। তাঁর অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থেই বিচারপতি সৌমেন সেন এমন নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সেই মামলায় দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজ করার সিদ্ধান্ত জানাল ডিভিশন বেঞ্চ। FIR খারিজ করল বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত থেকে সংগৃহীত নথি ফেরত দিতে হবে CBI-কে। সিঙ্গেল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিত করার কথা জানার পরেও কি করে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস সেই রায়ের কপি সিবিআইকে পাঠাল? বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি।
এমবিবিএস পরীক্ষায় ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে অনেক প্রার্থী বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে এইভাবে একাধিক প্রার্থী ভর্তি হয়েছেন বলে মামলা দায়ের করেন ইতিশা সোরেন নামে এক প্রার্থী। সেই মামলা গত বছর থেকে চলছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।
মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য দিনে দিনে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। শেখ শাহজাহানকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। রাজ্য পুলিশের উপর আদালতের কোনও আস্থা নেই। সেই কারণে সিবিআইয়ের উপর এই মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে। এই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে ৫০ জন প্রার্থীর নাম জমা দেওয়া হয়েছিল। ৫০ জনকে মামলায় যুক্ত করে তাঁদের শংসাপত্র যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। রাজ্যের স্ক্রুটিনি কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।