কাপড়, বাসন, আসবাব পত্র অনেক কিছুর হাট তো দেখেছেন। তবে এবার এক ভিন্ন হাটের কথা জেনে নিন। যেখানে একসঙ্গে অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের সমাহার ঘটে বাংলাদেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাট কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। দুর্গা পুজোকে ঘিরে যন্ত্র এবং যন্ত্রীর মিলন মেলা বসে এই হাটে। বাদ্যযন্ত্রের এই হাট জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমন।
ঢাকের আওয়াজ ছাড়া দূর্গা পুজো যেন অসম্পূর্ণ। মহাষষ্ঠী থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত চাই ঢাকের ঢেং কুরাকুর। তাই প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসে এই হাট। নাম ঢাকের হাট হলেও এখানে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র আনা হয়। ঢাক ঢোল সহ বাদকরা চুক্তিবদ্ধ হন আয়োজকদের সঙ্গে। কোন ঢাকের কত মূল্য হবে তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার উপর।
সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছাড়িয়ে যায় লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত। প্রতিবছর দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এই ৫০০ বছরের ঢাকের হাট বসে। এই হাটে মূলত পূজো আয়োজক ও ঢাকিদের মধ্যে চুক্তি হয় চার থেকে পাঁচ দিনের। তিনদিনের এই হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে যন্ত্রীরা এসে নেচে গেয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আকৃষ্ট করেন ক্রেতাদের। যন্ত্রীরা জানান হাটে বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি হচ্ছে ভালো। একইসঙ্গে যন্ত্রীর পাশাপাশি ঢাক, ঢোল, বাঁশি, ব্যান্ড ভাড়া দেওয়া হয়। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর হাটে বাদ্যযন্ত্র কম তাই দামটাও একটু বেশি। তবে যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্য পেয়ে খুশি ক্রেতারা।
এক সময় এই হাটে পাঁচশো বাদক আসলেও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে সংখ্যা। প্রযুক্তির কল্যাণে বাদকদের সঙ্গে আগে থেকে কথা বলে নেয় পুজো কমিটিরা। ফলে দিন দিন হারাচ্ছে এই হাটের জৌলুস। এবছর ২০০ বাদক এসেছে এই হাটে। যেখানে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
এদিকে ঢাকের হাটের নিরাপত্তায় তৎপর প্রশাসন। হাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। কথিত আছে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে কটিয়াদীতে প্রথম ঢাকের হাটের সূচনা হয়।