মোকা-প্রলয়ের মুখে বাংলাদেশ, মৃত্যু ভয়ে দ্বীপবাসীর আর্তনাদ ‘উদ্ধার করেনি সরকার’

মোকা-প্রলয়! সামুদ্রিক ঘূর্ণি মোকা (Mocha Cyclone) একেবারে খোলা উপকূল দিয়ে আঘাত করবে (Bangladesh) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের তটভূমিতে। মাঝে নেই কোনও প্রাকৃতিক বাধা। এর ফলে ঝড়ের…

মোকা-প্রলয়! সামুদ্রিক ঘূর্ণি মোকা (Mocha Cyclone) একেবারে খোলা উপকূল দিয়ে আঘাত করবে (Bangladesh) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের তটভূমিতে। মাঝে নেই কোনও প্রাকৃতিক বাধা। এর ফলে ঝড়ের গতি কমার সম্ভাবনা নেই। মোকা আঘাত করবে বাংলাদেশের বিখ্যাত (St.Martin) সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। মৃত্যুর মুখে অরক্ষিত দ্বীপবাসীর আর্তনাদ আগে থেকে উদ্ধার করেনি সরকার।

মোকার হামলা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনছে ১৯৭০ সালে  ঘূর্ণি ঝড়ের ভয়াল স্মৃতি। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে সেই সাইক্লোনে (Bhola Cyclone) অগনিত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভোলা এলাকায়। কারণ, সেই সময়ে সামুদ্রিক ঘূর্ণির পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি ছিলনা বিশ্বে। তবে এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। ঘূর্ণি জন্মানোর এক সপ্তাহ আগে থেকে সতর্কতা শুরু হয়। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, মোকা ঘূর্ণির পূর্বাভাস থাকলেও কেন বঙ্গোপসাগরের বিখ্যাত সেন্ট মার্টিন (নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ) থেকে সব বাসিন্দাদের সরানো হয়নি?

পূর্ববর্তী বিভিন্ন সামুদ্রিক ঘূর্ণি সুন্দরবনে ধাক্কা খেয়ে বাংলাদেশ উপকূলে প্রবেশের আগেই গতি হারায় অনেকটা। তবুও ঘূর্ণির হামলার পর বিধ্বংসী পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সহ বিশ্বের সবকটি ঝড় পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল মোকা ঘূর্ণি সরাসরি চট্টগ্রাম হয়ে মায়ানমারের দিকে গতিপথ তৈরি করেছে। এর পরেও কেন বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে বাসিন্দাদের সম্পূর্ণ সরানো হয়নি সেই প্রশ্নে শেখ হাসিনা সরকার সমালোচিত হচ্ছে। আশঙ্কা কমপক্ষে ১০-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়বেন দ্বীপে থেকে যাওয়া বাসিন্দারা। তারা মৃত্যুর মুখে।

সাগরপথে নিজ উদ্যোগে ট্রলারে চেপে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে পালিয়ে এসেছেন তিন হাজারের বেশি। তারা নিকটবর্তী টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন বলে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের খবর। এতে আরও বলা হয়েছে দ্বীপে থেকে গেছেন আরও কয়েক হাজার। অভিযোগ তাদের সরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মোকা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণি মোকাবিলায় কক্সবাজারের ১ হাজার ৬০০ আশ্রয় কেন্দ্র রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। আশঙ্কা করছি এই ঘূর্ণি মায়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানবে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা ও বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে সামুদ্রিক ঘূর্ণির পরিস্থিতি বিচার করে নৌ বাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌ বাহিনী জানাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোকা মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য ২১টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট প্রস্তুত।

বাংলাদেশ উপকূলরক্ষী বাহিনী জানাচ্ছে, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ, চরাঞ্চল, সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে রাখার  প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে কোস্ট গার্ডের সকল জোন, জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোষ্ট, ডিজাস্টার রেসপন্স এন্ড রেস্কিউ টিম, মেডিকেল টিম ও ডুবুরি টিম প্রস্তুত রয়েছে।