Wheat Price: আটা বাড়াল নয়াদিল্লির টেনশন, এক বছরে ৪০% দাম বাড়ার কারণটা কি জানেন?

প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আটার সংকটের মধ্যে ভারতেও এর দাম আকাশ ছোঁয়া (wheat price) হয়েছে। জানুয়ারি মাসে আটার দাম দু’বার বেড়েছে।

wheat price-in-india-hike

প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে আটার সংকটের মধ্যে ভারতেও এর দাম আকাশ ছোঁয়া (wheat price) হয়েছে। জানুয়ারি মাসে আটার দাম দু’বার বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, খোলাবাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, প্যাকেটে এর দাম ৪৫-৫৫ টাকা কেজি।

গত বছরের তুলনায় এবার আটার দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে খুচরো আটার দাম ছিল ২৫-২৭ টাকা প্রতি কেজি, যখন প্যাকেটে ব্র্যান্ডেড আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা প্রতি কেজি। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গম ও আটার দাম বাড়ায় উত্তেজনা বেড়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারতে আটার দাম বাড়ছে? চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
গমের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কী?
১. ময়দা এবং সুজির দামও দ্রুত বাড়ছে, যার অর্থ মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে, যার কারণে সাধারণ মানুষের রান্নাঘরের বাজেট বিঘ্নিত হতে পারে।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

২. প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ যোজনার অধীনে বিনামূল্যে দেওয়া রেশনে আগে গম এবং চাল সমান পরিমাণে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু গমের দাম বৃদ্ধির পরে, অনেক রাজ্যে গম দেওয়া হচ্ছে না বা কম দেওয়া হচ্ছে।

কেন বাড়ছে গম বা আটার দাম, ৩টি কারণ…
১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উৎপাদন হ্রাস
গম উৎপাদনে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ। উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং বিহার হল প্রধান গম উৎপাদনকারী রাজ্য, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২১-২২ সালে গমের উৎপাদন কমেছে।

২০২২ সালের মার্চ মাসটি গত ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে দেশের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.২৪ ডিগ্রি। এ কারণে গমের উৎপাদন ১২৯ মিলিয়ন টনের পরিবর্তে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬ মিলিয়ন টনে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞ দেবেন্দ্র শর্মা বলেছেন – গরমের কারণে শুধু রবি ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যে গমের ফসলেও উৎপাদন কম দেখা গেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হতে পারে।

২. গম সরকারি ক্রয় হ্রাস
আটার দাম বাড়ার পেছনে দ্বিতীয় কারণ গম সরকারি ক্রয় কমে যাওয়া। ২০২০-২১ সালে ভারতীয় সরকারী সংস্থাগুলি ৪৩.৩ মিলিয়ন টন গম সংগ্রহ করেছিল। এই সংখ্যা২০২১-২২ সালে ১৮ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি পৌঁছেছে অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম।
কৃষি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরমজিৎ সিং এর পেছনে দুটি কারণ জানিয়েছেন। ১. সমর্থন মূল্য হ্রাস ২. সরকারী সংস্থার বিধি ও প্রবিধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে। পরমজিৎ সিং বলেছেন- ভারত সরকার গমের সমর্থন মূল্য প্রায় ২৩ টাকা রেখেছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীরা ২৫-২৬ টাকা দিয়ে মানুষের কাছ থেকে গম কিনেছিল।

ব্যবসায়ীরা কৃষকের বাড়িতে ক্রয় এবং ওজনের প্রক্রিয়াটি করে, যেখানে সরকারী সংস্থার নিয়ম-কানুন খুব জটিল। এ কারণেও কৃষকরা সরকারি সংস্থাকে গম দিতে চান না। তিনি আরও বলেন- নেপাল থেকে ব্যবসায়ীরা গম কিনে বিহার ও ইউপির মতো রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। আপনি বিহারকে মান্ডির উপস্থিতির একটি বড় কারণ হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন।

৩. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সরকারের নীতি
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর সারা বিশ্বে গম রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের অন্যান্য দেশে গম বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

সরকার গম রপ্তানির জন্য ৭ জন প্রতিনিধির একটি দলও গঠন করেছে, যারা দেশগুলোর সঙ্গে গম রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। ভারত ২০২১-২০২২ সালে ৭.৩ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছে, যা ২০২০-২১ সালে ২.২ মিলিয়ন টন থেকে বেড়েছে। পরমজিৎ সিং বলেন, ‘এটা সরকারের অদূরদর্শী নীতির ফল। উৎপাদন কমেছে ২.২ শতাংশ, তবুও সরকার রপ্তানি বাড়িয়েছে। তবে গম মজুদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরে তাড়াহুড়ো করে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

দাম কমাতে নিয়োজিত সরকার, খোলা বাজারে গম বিক্রি করবে
ময়দার দাম লাগাতার বৃদ্ধির পর কেন্দ্রীয় সরকার তৎপর। কেন্দ্রীয় সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সব স্তরেই দাম কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর মতে, কেন্দ্রীয় সরকার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে খোলা বাজারে ৩০ মিলিয়ন টন গম বিক্রি করবে। এ জন্য ই-টেন্ডারিংও আহ্বান করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর খোলা অবস্থায় আটার দাম কেজিতে ১০ টাকা কমতে পারে।

সরকার আটার দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকার নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এর প্রধান কারণ হল ২০২৩ সালে ৯টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বের তিনটি রাজ্য ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে।