ভারতের প্রথম কোয়ান্টাম ডায়মন্ড মাইক্রোস্কোপ তৈরি করল আইআইটি বোম্বে

IIT Bombay Develops India’s First Quantum Diamond Microscope for 3D Magnetic Imaging

ভারতের বিজ্ঞান গবেষণায় যোগ হল এক নতুন অধ্যায়। দেশের প্রথম ‘ইন্ডিজেনাস কোয়ান্টাম ডায়মন্ড মাইক্রোস্কোপ’ (Quantum Diamond Microscope) তৈরি করল আইআইটি বোম্বে, যা ৩-ডি ম্যাগনেটিক ইমেজিং বা ত্রিমাত্রিক চৌম্বক বিশ্লেষণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।

Advertisements

আইআইটি বোম্বের গবেষক দল জানিয়েছে, এই উন্নত মানের যন্ত্রটি পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, এবং এটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মাইক্রো ও ন্যানো স্তরের গঠন বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টর, স্পিনট্রনিক্স, এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং গবেষণায় বিশাল ভূমিকা রাখবে।

   

🔬 কী এই কোয়ান্টাম ডায়মন্ড মাইক্রোস্কোপ?

কোয়ান্টাম ডায়মন্ড মাইক্রোস্কোপ এমন এক গবেষণার যন্ত্র যা ডায়মন্ডের ন্যানো-কাঠামোয় থাকা ‘নাইট্রোজেন ভ্যাকান্সি সেন্টার’ ব্যবহার করে চৌম্বক ক্ষেত্রকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মাপতে পারে।
এটি এমনকি একটি ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও ছোট চৌম্বক পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম—যা প্রচলিত মাইক্রোস্কোপের ক্ষমতার বহু গুণ বেশি।

আইআইটি বোম্বের এক গবেষক বলেন, “এই প্রযুক্তি শুধু পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় নয়, বরং জীববিজ্ঞান, মেডিকেল ইমেজিং, এবং ন্যানোটেকনোলজির জন্যও দরজা খুলে দেবে।”

🧠 দেশীয় উদ্ভাবনের বড় পদক্ষেপ

এখন পর্যন্ত কোয়ান্টাম ডায়মন্ড মাইক্রোস্কোপ প্রযুক্তি কেবলমাত্র কিছু উন্নত দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানের হাতে সীমিত ছিল। এবার ভারতও সেই তালিকায় নিজের নাম লিখল।

এই সাফল্য ‘Make in India for Science’ কর্মসূচির বড় প্রমাণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক এই আবিষ্কারকে “জাতীয় গবেষণা অবকাঠামোর মাইলফলক” বলে উল্লেখ করেছে।

🧩 সম্ভাবনা কোথায়?

এই যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এখন চৌম্বক ক্ষেত্রের ত্রিমাত্রিক ছবি পেতে পারবেন।
এর ফলে –

সুপারকন্ডাক্টর ও ম্যাগনেটিক উপাদানের বিশ্লেষণ,

Advertisements

কোয়ান্টাম সেন্সরের নির্ভুলতা বৃদ্ধি,

ন্যানোস্কেল ইলেকট্রনিক সার্কিট ডিজাইন,

এবং মেডিকেল নিউরো ইমেজিং প্রযুক্তি–তে অসাধারণ উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

🎓 আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় ছাপ

বিশ্বজুড়ে এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জার্নাল Nature Physics এবং Applied Quantum Science Review-এর মতো প্রকাশনাগুলিতে এই আবিষ্কার নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।

গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর সৌরভ পাল এবং ডঃ রোশনি ভাটনাগর, যাঁরা গত তিন বছর ধরে এই প্রকল্পে কাজ করেছেন।

🧲 ভবিষ্যৎ দিক

IIT Bombay এখন এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে দেশীয় বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং স্টার্টআপ সংস্থাগুলি এটি ব্যবহার করতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামী বছরের মধ্যে এই মাইক্রোস্কোপের বাণিজ্যিক সংস্করণ তৈরি হতে পারে, যা ভারতের নিজস্ব কোয়ান্টাম রিসার্চ ইকোসিস্টেমকে আরও মজবুত করবে।

ভারতের গর্ব, ভবিষ্যতের দিশা

এই সাফল্য শুধু একটি প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, বরং ভারতের গবেষণা-নির্ভর আত্মনির্ভর যাত্রার এক নতুন অধ্যায়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও উন্নত ইমেজিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের যে সম্ভাবনা রয়েছে, এই উদ্ভাবন তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল।