ফলাফলের আগেই এক্সিট পোল নিয়ে বড় মন্তব্য তেজস্বীর

tejashwi-yadav-bihar-election-2025-exit-polls-reaction

পটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর ভোটগ্রহণ শেষ হতেই দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে নজর এখন বিহারের দিকে। ভোট পর্ব শেষে এক্সিট পোলের হাওয়া বইতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাঁটাছেঁড়া। একের পর এক চ্যানেল এবং সংস্থা যখন মহাগঠবন্ধনের ভরাডুবির ইঙ্গিত দিচ্ছে, তখন সেই এক্সিট পোলকেই ‘মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির হাতিয়ার’ বলে আক্রমণ করলেন আরজেডি নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদব।

Advertisements

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তেজস্বী বলেন, “আমরা এইসব জরিপ দেখে না খুশি হই, না ভ্রমে পড়ি। এই সমস্ত জরিপ আসলে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করার কৌশল। সরকারি আধিকারিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এসব তথ্য তৈরি করানো হয়।’’

   

টেট কাণ্ডে হাই কোর্টে রাজ্যের ‘দাগি’ সংখ্যা প্রকাশে বাড়ল চাঞ্চল্য

তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ তোলেন, “যে ‘গোদি মিডিয়া’ ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচি দখল করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তারাই এখন এই এক্সিট পোল প্রকাশ করছে। নির্বাচনী সময়ে তারা ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বিহারে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো ভুয়ো খবর ছড়িয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ প্রচারমুখী, সাজানো গল্প।”

তেজস্বীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি এক্সিট পোলের ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর মতে, মাঠের বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। “বিহারের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কৃষক, যুবক, গরিব, শ্রমিক  সবাই এই রাজ্যে নতুন দিক দেখতে চায়। মানুষ ভোট দিয়েছে মাটির সঙ্গে থাকা রাজনীতির জন্য, প্রোপাগান্ডার জন্য নয়,” বলেন আরজেডি নেতা।

উল্লেখ্য, বেশিরভাগ এক্সিট পোলেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে এগিয়ে দেখানো হয়েছে। অনেক জরিপে দাবি করা হয়েছে, এনডিএ ২৪৩ আসনের মধ্যে ১৪০–এর বেশি পেতে পারে, যেখানে মহাগঠবন্ধন থামবে ৯০ থেকে ১০০ আসনের মধ্যে। এই ফল প্রকাশের পর থেকেই আরজেডি শিবিরে তৎপরতা বেড়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, তেজস্বী দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন বুথস্তরের রেকর্ড ও ইভিএম স্ট্রংরুমে নজরদারি বাড়াতে।

Advertisements

তেজস্বীর মন্তব্যে বিজেপি শিবির পাল্টা আক্রমণ করেছে। বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “হারের আশঙ্কা দেখেই আরজেডি এখন মিডিয়ার ওপর দোষ চাপাচ্ছে। জনগণ এবার আর ‘জঙ্গল রাজ’-এ ফিরে যেতে চায় না, তাই তারা উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তেজস্বীর এই বক্তব্য কৌশলগত। তারা বলছেন, এক্সিট পোলকে আগেভাগে অবিশ্বাসযোগ্য ঘোষণা করে তিনি তার ভোটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে চাইছেন। পাশাপাশি, ফলাফলের আগে ‘মিডিয়া পক্ষপাত’ নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে বাস্তব রায় ঘোষণার পর সমর্থকদের মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছেন।

একইসঙ্গে মহাগঠবন্ধনের ভিতরে চাপা উদ্বেগও বাড়ছে। কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির অনেক নেতা এখনও আশাবাদী হলেও, তেজস্বীর কণ্ঠে স্পষ্ট বাস্তববোধের সুর। তিনি বলেন, “বিহারের মানুষ চুপচাপ ভোট দেন। এক্সিট পোলের কাগজে ভোটের মনের ভাষা ধরা যায় না। ৪ ডিসেম্বর ভোটের ফল সব পরিষ্কার করে দেবে।”

বর্তমানে বিহারের রাজনীতিতে একদিকে বিজেপির প্রচার ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’-এর নামে জোর গতি পেয়েছে, অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন বলছে, “বিহার চায় নতুন দিশা।” এখন দেখার বিষয়, ২০২৫-এর এই নির্বাচনে এক্সিট পোল সত্যি হয় কিনা, নাকি তেজস্বীর আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত বিহারের মাটিতে বিজয়ের হাসি ফোটায়।