কলকাতা: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিতর্কের আগুন আরও উস্কে দিলেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ও ওডিশার সাংসদ সম্বিৎ পাত্র। কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধুরীর পোষা কুকুরকে নিয়ে সংসদ ভবনে উপস্থিত হওয়া নিয়ে যে রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি হয়েছে, তার মধ্যেই তিনি সরাসরি আক্রমণ শানালেন রেণুকা চৌধুরী এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ দু’জনেই সংসদের শালীনতা ও মর্যাদা লঙ্ঘন করেছেন।
সম্বিৎ জানান, “গতকাল যখন সাংসদ রেণুকা চৌধুরী নিজের পোষা কুকুর নিয়ে সংসদে আসেন, তখন মিডিয়া তাঁকে প্রশ্ন করেছিল এটা আদৌ অনুমোদিত কি না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ তো ছোট্ট একটা প্রাণী, কামড়ায় না। যাঁরা ভিতরে বসে আছেন, তাঁরা কামড়ান।’” এই মন্তব্যকে ‘অশালীন’ ও ‘অসম্মানজনক’ বলে দাবি করেন পাত্র।
উচ্ছেদ বন্ধ হবেনা! জিরো কম্প্রোমাইজ হুঁশিয়ারি হিমন্তর
তিনি জানান, সংসদে নিরাপত্তা-বিধি বা ‘প্রোটোকল’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রেণুকা বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে বলেন “কীসের প্রোটোকল?” এই মন্তব্যেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। সম্বিৎ পাত্র আরও বলেন, আজ যখন সাংবাদিকরা রাহুল গান্ধীকে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন, তিনি রসিকতার সুরে জানতে চান “কুকুরটা এসেছে নাকি? ভিতরে তো অনুমতি আছে। পাত্রের অভিযোগ, এই মন্তব্য পুরো সংসদ, এমনকি তাঁর নিজের জোটভুক্ত সাংসদদেরও অসম্মান করে।
তিনি বলেন, “রাহুলজি, এভাবে কথা বলা আপনার মতো ব্যক্তির কাছ থেকে মানায় না। দেশে কী বার্তা যায়? আপনার এই আচরণে মানুষ কি আপনাকে সম্মান করবে?” সম্বিৎ পাত্র দাবি করেন, রেণুকা চৌধুরী ও রাহুল গান্ধী দু’জনের মন্তব্যই সংসদের শালীনতা, গাম্ভীর্য এবং বিধান প্রক্রিয়ার প্রতি অবমাননাকর। তাঁর কথায়, “দুই R—Rahul এবং Renuka—কে তৃতীয় R অর্থাৎ Responsibility মনে করিয়ে দেওয়া দরকার।”
সংসদে বিগত দু’দিন ধরে নানা ইস্যুতে অস্থিরতা অব্যাহত। তার মধ্যে রেণুকা চৌধুরীর পোষা প্রাণী নিয়ে ঢোকার ঘটনায় নতুন করে ক্ষোভ বেড়েছে বিতর্কের। সাধারণত সংসদ ভবনে পোষা প্রাণী প্রবেশ অনুমোদিত নয়, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কংগ্রেস নেত্রীর বক্তব্য এবং রাহুলের মন্তব্যে তা রাজনৈতিক রূপ নিয়ে ফেলেছে।
কংগ্রেস অবশ্য এই সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বলছে এ সবই বিজেপির তৈরি অতি-রাজনীতি। তাদের দাবি, “বিজেপি সংসদের আসল ইস্যু বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক আন্দোলন এড়াতে এসব তর্ক সামনে আনছে।” যদিও বিজেপি পাল্টা বলছে, সংসদের শালীনতা ভেঙে রাজনৈতিক নাটক করছেন কংগ্রেস নেতারা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপি-কংগ্রেসের এ ধরনের বাক্যবাণ ভবিষ্যতের উত্তপ্ত সেশন-এর পূর্বাভাসই দিচ্ছে। সংসদে পোষা প্রাণী আনার এই ঘটনাটি হয়তো ছোট ইস্যু, কিন্তু সেটিকে ঘিরে তৈরি হওয়া তর্ক এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে বড় প্রতীকী গুরুত্ব তৈরি করেছে বিশেষত যখন সরকার–বিরোধী সম্পর্ক ক্রমশই মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছে। সম্বিত পাত্রের বক্তব্যে তাই শুধু কটাক্ষ নয়, বরং একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা “সংসদের গাম্ভীর্য নিয়ে কোনও রকম অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না।”
