কলকাতা: বাবরি বিতর্কে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এইমুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। রবিবার তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, আসন্ন নির্বাচনে তিনি AIMIM-এর সঙ্গে জোট করে লড়াই করতে পারেন। এই মন্তব্য সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়, আর এই ইস্যুতেই সরব হলেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ও সাংসদ সম্বিত পাত্র। তাঁর দাবি, “এ দেশ গণতান্ত্রিক। হুমায়ুন কবীর যদি AIMIM-এর সঙ্গে জোট করে ভোটে দাঁড়াতে চান, তাঁর অধিকার আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই রাজ্যে তুষ্টিকরণের রাজনীতিই কি শেষ কথা?”
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সাম্বিত পাত্র ফের মনে করিয়ে দেন, এটাই প্রথম নয় যখন হুমায়ুন কবীর বাবরি মসজিদ ইস্যুতে বিতর্কে জড়ালেন। এর আগেও একই বিষয়ে মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। পাত্র বলেন, “তখনও তৃণমূল তাঁকে দলে রেখেছিল, বহিষ্কার করেনি।
বাবরি বিতর্কেই এবার হুমায়ুনের হাত ধরলেন ওআইসি
আজ আবার সেই একই ইস্যুতে তিনি আলোচনায় এটা নতুন কিছু নয়। কারণ বাংলায় একদিকে রয়েছে তুষ্টিকরণের রাজনীতি, অন্যদিকে রয়েছে উন্নয়নের রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোন বা হুমায়ুন কবীর দু’জনকেই মানুষ একই গোত্রের রাজনীতির ধারক-বাহক হিসেবে দেখে।”
বাবরি মসজিদ শিলান্যাস নিয়ে বিতর্ক চলছে বঙ্গে। এমন সময়ে AIMIM-এর সঙ্গে সম্ভাব্য ‘জোট’-এর ইঙ্গিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে দুইভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে প্রথমত, এটি তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা; দ্বিতীয়ত মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক লক্ষ্য করে নির্বাচনে ঝাঁপ। তবে বিজেপির দৃষ্টিতে এই জোটের ইঙ্গিত তৃণমূলের ‘double standard’-এর আরেকটি দৃষ্টান্ত। শুধু তাই নয় বিজেপি এবং তৃণমূল দুই দলেরই অভিযোগ হুমায়ুন এর আগেও এ দল সে দল করে বেড়িয়েছেন। কিন্তু AIMIM কতদিন থাকবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সাম্বিত পাত্র বলেন, “বাংলার মানুষ দেখছে এখানে একদিকে তুষ্টিকরণের দৌড় চলছে, আর অন্যদিকে উন্নয়নের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে বিজেপি-এনডিএ। আজ যে কেউ যেকোনো দাবি করতে পারে, এটা গণতন্ত্র। কিন্তু মানুষের রায় শেষ কথা বলবে। জনগণ উন্নয়নকে বেছে নেবে এটা আমরা নিশ্চিত।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে বিজেপি স্পষ্টভাবে একটি বিবৃতি তৈরি করছে তৃণমূলের অন্তর্গত তরফেই হোক বা বহির্গত বিতর্ক, সবই একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুভূতি কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে, এবং সেই কারণেই শাসকদলের বিরুদ্ধে বিজেপির “appeasement politics”-এর অভিযোগ আরও প্রবল হচ্ছে। অন্যদিকে তৃণমূল শিবির অবশ্য এই ইস্যুকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তাঁদের মতে, হুমায়ুন কবীর দলে নেই তাই তাঁর বক্তব্যে তৃণমূলের কোনও ভূমিকা নেই।
কিন্তু বাস্তবতা হল, হুমায়ুনের নামের সঙ্গে তৃণমূলের পূর্ববর্তী সম্পর্ক এবং বাবরি মসজিদ বিতর্কে তাঁর আগের মন্তব্যগুলি এখনও জনমানসে রয়ে গেছে। আর সেই স্মৃতিই বিজেপিকে আবারও ‘সুযোগ’ করে দিয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে কঠোর সুরে আক্রমণ শানানোর।
বঙ্গ রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, হুমায়ুন–AIMIM ইস্যু সামনে এনে বিজেপি সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তুষ্টিকরণের অভিযোগ আরও একবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বিশেষত নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক তাদের জন্য লাভজনক বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
তবে সত্যিই কি AIMIM-এর সঙ্গে জোট করে হুমায়ুন কবীর ভোটযুদ্ধে নামবেন? নাকি এটি রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর কৌশল? সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু একথা নিশ্চিত এই বিতর্ক নির্বাচনী রাজনীতির উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিল, এবং সামনের দিনগুলোতে এই ইস্যু বাঙালি রাজনীতির আঙিনায় আরও আলোচনার জন্ম দেবে।
