কর্ণাটক কংগ্রেসে নেতৃত্ব নিয়ে তীব্র টানাপোড়েন নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এক বিশেষ প্রতিবেদনে এক অজ্ঞাত বক্তা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারের মধ্যে চলতে থাকা ক্ষমতার দন্দ্ব, যার ফলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এখন গুরুতর রাজনৈতিক সমীকরণের মুখোমুখি।
প্রথমেই উঠে এসেছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কংগ্রেস অতীতে রাজ্যস্তরের প্রবল নেতৃত্ব সংকট মোকাবিলা করেছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে উন্নীত করার কৌশল অবলম্বন করে। যেমন—এস.এম. কৃষ্ণ বা মল্লিকার্জুন খাড়গের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শক্তিশালী আঞ্চলিক নেতাদের কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়ে রাজ্যে সমীকরণ রক্ষা করা হয়েছে। এই ধরণের পদক্ষেপ বহুবার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থামাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সমস্যার মূল এখানেই। আজ কংগ্রেস কেন্দ্রের ক্ষমতায় নেই, ফলে সিদ্ধারামাইয়ার মতো অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় নেতাকে যদি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরাতে হয়, তাহলে তাঁকে কেন্দ্রের ভূমিকা দিয়ে “সম্মানজনক বেরোনোর পথ” দেওয়া কঠিন। যে কারণে নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্নে হাইকম্যান্ডের সামনে পড়েছে বড় অন্তর্দ্বন্দ্ব।
ডি.কে. শিবকুমার, যিনি বর্তমানে উপমুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি, দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে একসময়ে মৌখিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন—যে উপযুক্ত সময়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচন জয়ের পর সরকার গঠনের সময় ক্ষমতা ভাগাভাগির সূত্র ধরে আংশিক সমাধান হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয়নি। এখন শিবকুমারের শিবির ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে। তাঁরা দাবি করছে, দল ক্ষমতায় থাকার সময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। ফলে শিবকুমার চাইছেন—মেয়াদের মাঝপথে নেতৃত্ব হস্তান্তর।
রাজ্যের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে প্রকাশ্যে পরোক্ষ মন্তব্য, রাজনৈতিক খোঁচা, ক্ষমতা অর্জনের ইঙ্গিত—এসব পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলছিল। এর জেরে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি (AICC) সম্প্রতি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। দলীয় নির্দেশে দুই পক্ষকেই প্রকাশ্যে বিরোধ এড়িয়ে চলার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কারণ ২০২৮–২০২৯ সালের বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন দলীয় ঐক্য ছাড়া অসম্ভব বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিশেষ প্রতিবেদনে বক্তা উল্লেখ করেন—AICC চাইছে না যে পুরনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের কংগ্রেসের অবস্থান দুর্বল করুক, বিশেষ করে বিজেপি পুনরুত্থানের সম্ভাবনা থাকা অবস্থায়। তাই আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই পক্ষকে সমঝোতার পথে রাখাই প্রধান লক্ষ্য।
