বিহারের ফলাফল নিয়ে নিজের রাজ্যে বিস্ফোরক মোদী

bihar-election-nda-victory-pm-modi-development

সুরাট: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ–র অভাবনীয় জয়ের পরদিনই রাজনৈতিক তরঙ্গে আরও এক ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সুরাট বিমানবন্দরে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি মহাগঠবন্ধনকে তীব্র আক্রমণ করেন এবং দাবি করেন বিহারের মানুষ এবার জাতপাতের সমীকরণ ছুঁড়ে ফেলে উন্নয়নকেই ভোট দিয়েছেন।

Advertisements

এনডিএ এবার ২৪৩ আসনের মধ্যে ২০২টি আসন জিতে দ্বিতীয় দফায় ২০০–র গণ্ডি পেরিয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৮৯, জেডিইউ ৮৫, লোজপা (রামবিলাস) ১৯, হামস ৫ এবং রাষ্ট্রীয় লোক মরচা ৪। বিপরীতে মহাগঠবন্ধন মুখ থুবড়ে পড়ে মাত্র ২৯টি আসনে। আরজেডি পেয়েছে ২৫, সিপিআই(এমএল) ২, সিপিআই(এম) ও আইআইপি একটি করে। এদিকে এআইএমআইএম পেয়েছে ৫টি এবং বিএসপি ১টি আসন।

   

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবারের নির্বাচনে বিজয়ী এনডিএ এবং পরাজিত মহাগঠবন্ধনের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ভোটের ফারাক। এটা ছোট সংখ্যা নয়। এর মানে হলো সাধারণ মানুষ একসুরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর সেই সিদ্ধান্তের মূল ইস্যু ছিল উন্নয়ন।”

মোদীর দাবি, বিহারের নারী ও যুব ভোটারদের যুগলবন্দিই রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছে। তিনি বলেন, “বিহারের মানুষ আজ উন্নয়নকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত। দেশের যেকোনো প্রান্তে যান, বিহারের পরিশ্রমী মানুষদের পাবেন। তাদের এই বিকাশ-তৃষ্ণাই আজ রাজনীতিকে নতুন আকার দিয়েছে।”

সুরাটে বসবাসকারী বহু বিহারির প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, “আমার সুরাটের ভাইবোনরাও পুরো নির্বাচন খুঁটিনাটি দেখে গেছেন। বিহারের মানুষকে কেউ রাজনীতি শেখাতে পারে না উল্টে তারা নিজেরাই দেশকে রাজনীতি শেখায়।” করোনাকালীন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন যে, সংকটের মধ্যেও বিহারের বহু মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন, নিজেদের উপার্জনের নতুন পথ তৈরি করেছিলেন।
“এটাই বিহারের শক্তি” মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।

Advertisements

‘জামানতী নেতা’দের বিরুদ্ধে সরাসরি বার্তা বক্তৃতায় মোদী আক্রমণের তির ছুঁড়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে লক্ষ্য করে। তিনি বলেন, “গত দুই বছর ধরে জামিনে থাকা কয়েকজন নেতা শুধু জাতপাতের রাজনীতি ঘুরিয়ে বেড়িয়েছেন বিহারজুড়ে। ভেবেছিলেন, জাতবিভাজনের বিষ ছড়িয়ে লাভ মিলবে। কিন্তু বিহারের মানুষ সেই বিষকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।” তার দাবি, বিহারের এই ফলাফল শুধু রাজনৈতিক পরাজয় নয়, একটি “মানসিকতার পরাজয়”।

এবারের ফলাফল শুধু এনডিএ–র জয়ের গল্প নয়, মহাগঠবন্ধনের তীব্র ভরাডুবির গল্পও বটে। বহুদিন ধরেই আরজেডি ও কংগ্রেস আত্মবিশ্বাসী ছিল যে যুব সমাজ ও সংখ্যালঘু ভোট একত্রে তাদের শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল বৃহৎ ভোটান্তর হয়েছে এনডিএ–র দিকে।

বিশেষত প্রাশান্ত কিশোরের জন সুরাজ যারা প্রথমবার নির্বাচনে নেমে নিজেদের শক্ত উপস্থিতি দেখাতে চেয়েছিল একটিও আসন পায়নি। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারের এই ফলাফল আগামী কয়েক বছর রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্ককে নতুন করে সাজাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিহারে এনডিএ–র এই জয়কে শুধু উন্নয়ন বা রাজনৈতিক একমুখী সমর্থনের ব্যাখ্যায় ফেলা যাবে না। এর সঙ্গে যুক্ত মোদীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, নারীদের সুরক্ষা ও সুশাসন ইস্যু, এবং গ্রামীণ পরিসরে বিশেষভাবে লক্ষ্যভিত্তিক প্রচার। বিহারের রাজনীতি এখন নতুন পথে পা রাখছে। আর সেই পথের কেন্দ্রবিন্দুতে—উন্নয়ন বনাম পরিচয় রাজনীতির চিরাচরিত দ্বন্দ্বে এক নতুন মোড়।