গুয়াহাটি, ২ ডিসেম্বর: অসম দিবসের ভোরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা (Modi Asom Diwas Greetings) যেন নতুন উদ্যমে ভরিয়ে দিল রাজ্যবাসীর মন। বিশেষ এই দিনে অসমবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন,“অসম দিবসে আমার অসমের ভাইবোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।”স্বর্গদেও চাওলুং সুঙখাফার ঐতিহাসিক আদর্শকে সামনে রেখেই আধুনিক অসমকে আরও শক্তিশালী করে তোলার প্রতিশ্রুতি শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।
মোদীর কথায় স্পষ্ট অসম শুধু ভৌগোলিকভাবে নয়, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতিগত বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভারতের অমূল্য রত্ন। তাই তাঁর বার্তা শুধুই শুভেচ্ছা নয়, বরং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের একটি রূপরেখাও বটে। তিনি উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় এনডিএ সরকার এবং অসম সরকার মিলিতভাবে অসমের শারীরিক ও সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিমধ্যেই কার্যকর ফল দিতে শুরু করেছে।
SIR-এ মৃত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক সড়ক নির্মাণ, রেল পরিষেবা বৃদ্ধি, ব্রহ্মপুত্রের উপর একের পর এক সেতু এবং নদী–জলপথ সম্প্রসারণ সব মিলিয়ে আজকের অসম এক নতুন দিগন্তের দিকে এগোচ্ছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ডিজিটাল সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরিতেও নেয়া হয়েছে বহু উদ্যোগ, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের যুবসমাজকে আরও সুযোগ করে দেবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে তাই-আহোম সংস্কৃতি ও ভাষার প্রসার। মোদীর মতে, ঐতিহ্য কোনও দিনের বিষয় নয়; তা বহন করে একটি জাতির আত্মপরিচয়। তাই তাই-আহোম সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকার যে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে—সংস্কৃতি কেন্দ্র, গবেষণা প্রকল্প, ভাষা প্রমোশন প্রোগ্রাম, মিউজিয়াম আধুনিকীকরণ এসবই আগামী প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, এই পদক্ষেপ শুধু সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নয়, বরং তরুণদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেও সহায়ক হবে।
অসম দিবসের প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সহ রাজ্যের বিভিন্ন নেতৃবর্গ এবং সাংস্কৃতিক মঞ্চও প্রধানমন্ত্রীর বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের মতে, এই ধরনের বার্তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি ভারত সরকার যে অসমের ঐতিহ্য, উন্নয়ন এবং আবেগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে তার প্রতীক।
চাওলুং সুঙখাফা যিনি আহোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অসমের ইতিহাসে অনন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র—তার আদর্শ ছিল সমন্বয়, সহাবস্থান এবং ন্যায়নিষ্ঠ নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই আদর্শকেই আজকের ভারতের ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ স্বপ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন। তাঁর মতে, অসমের উন্নয়ন ভারতের পূর্ব–উত্তরাঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রগতির চাবিকাঠি এবং তাই কেন্দ্র ভবিষ্যতেও ‘ট্রান্সফর্মিং আসাম’ মিশনে বিনিয়োগ বাড়াবে।
অসম দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা রাজ্যের মানুষের কাছে যেমন উৎসাহজনক, তেমনি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এটি উত্তর–পূর্বাঞ্চলের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্তি। অসমে চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, যদি এগুলির বাস্তবায়ন নিখুঁতভাবে হয় তবে আগামী দশকে অসমকে ভারতের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল রাজ্য হিসেবে দেখা অসম্ভব নয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, মোদীর শুভেচ্ছা বার্তা শুধু উৎসবকে অলঙ্কৃত করেনি বরং অসমের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের এক দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছে। চাওলুং সুঙখাফার ঐতিহ্য এবং নতুন ভারতের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দুয়ের সমন্বয়ে অসম দিবস ২০২৫ হয়ে উঠল আশার বার্তা বহনকারী এক উল্লেখযোগ্য দিন।
