প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভারতের টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। বিএসএনএল-এর সিলভার জুবিলি উপলক্ষে তিনি ‘স্বদেশি’ 4G স্ট্যাক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এই অর্জনের মাধ্যমে ভারত এখন ডেনমার্ক, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো উন্নত দেশগুলির কাতারে যোগ দিয়েছে, যারা নিজস্ব প্রযুক্তিতে টেলিকম সরঞ্জাম উৎপাদন করে।
৯৮,০০০ মোবাইল টাওয়ারের কমিশন:
প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন প্রায় ৯৮,০০০ মোবাইল ৪জি টাওয়ার কমিশন করেন, যার মধ্যে বিএসএনএল-এর রয়েছে ৯২,৬০০টি আধুনিক ৪জি প্রযুক্তির সাইট। প্রায় ৩৭,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে তৈরি এই পরিকাঠামো সম্পূর্ণ স্বদেশি প্রযুক্তিনির্ভর। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই নেটওয়ার্ক ক্লাউড-ভিত্তিক, ভবিষ্যৎমুখী এবং সহজেই ৫জি-তে আপগ্রেড করা সম্ভব।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্য পূরণ: Swadeshi 4G Stack
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই উদ্যোগ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যপূরণে এক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ। দেশের গ্রামীণ জনপদে ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ, সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায়ন এবং বিএসএনএল-কে ৫জি রূপান্তরের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া—এটি এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে সংযোগ:
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৬,৭০০ অনাবদ্ধ গ্রাম, যার মধ্যে ওড়িশার ২,৪৭২টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত, প্রথমবার মোবাইল সংযোগ পাবে। সীমান্তবর্তী, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং বাম চরমপন্থা-প্রভাবিত এলাকাগুলোও এই নেটওয়ার্ক সুবিধার আওতায় আসবে। নতুনভাবে প্রায় ২০ লক্ষ গ্রাহক এই নেটওয়ার্কের সুবিধা পাবেন।
সবুজ টেলিকম এবং টেকসই পরিকাঠামো:
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই টাওয়ারগুলি সৌরশক্তিচালিত, যা ভারতের সবচেয়ে বড় সবুজ টেলিকম ক্লাস্টার হিসেবে পরিচিত। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করবে এবং দুর্গম গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে।
১০০ শতাংশ ৪জি স্যাচুরেশন প্রকল্প:
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও ঘোষণা করেন যে, ডিজিটাল ভারত নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১০০ শতাংশ ৪জি স্যাচুরেশন নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। এই মিশন-মোড প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৯,০০০ থেকে ৩০,০০০ গ্রাম সংযুক্ত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ডিজিটাল সুবিধা প্রসারিত হবে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
‘স্বদেশি’ ৪জি স্ট্যাক চালু হওয়ায় ভারত শুধু আমদানিনির্ভরতা কমাবে না, বরং নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈশ্বিক টেলিকম শিল্পেও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। ৫জি রূপান্তরের পথও সহজ হবে এবং সাধারণ মানুষ আরও দ্রুত ও উন্নত নেটওয়ার্ক সেবা পাবেন।
শেষ কথা:
দেশীয় প্রযুক্তি ও সবুজ শক্তির সমন্বয়ে তৈরি এই প্রকল্প ভারতকে ডিজিটাল পরাশক্তি হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্র, চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সবখানেই নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।