কার্বন ডাইঅক্সাইডের হাত ধরে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে উত্তরের চা-শিল্প

কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস এবার উত্তরবঙ্গের প্রাণভ্রমরা হতে চলেছে। বলা হচ্ছে, এই কার্বন উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির উত্তরণের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। একরের পর একর বিস্তৃত জমিতে বৃক্ষসৃজনের মাধ্যমে সঞ্চিত…

tea

কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস এবার উত্তরবঙ্গের প্রাণভ্রমরা হতে চলেছে। বলা হচ্ছে, এই কার্বন উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির উত্তরণের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। একরের পর একর বিস্তৃত জমিতে বৃক্ষসৃজনের মাধ্যমে সঞ্চিত কার্বন বিক্রি করে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির জিয়নকাঠি চা শিল্পে ডলার-ইউরো আয়ের নতুন পথ প্রশস্ত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। এর পোশাকি নাম কার্বন ট্রেডিং।

এই নিয়ে টি বোর্ডের তরফে চা গবেষণা সংস্থা (টিআরএ) সহ একাধিক বিদেশি সংস্থা ও কনসালট্যান্টদের সঙ্গে নিয়ে চা বাগানে (Tea garden) কার্বন ট্রেডিংয়ের ধারণা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত উত্তরবঙ্গ ও অসমের কিছু বাগানে এ নিয়ে পাইলট প্রোজেক্ট চালু হবে। ইতিমধ্যেই একাধিক শীর্ষ চা বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে টি বোর্ড, টিআরএ ও কার্বন ট্রেডিংয়ে বিশেষজ্ঞরা বৈঠক সেরেছেন।

টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৌরভ পাহাড়ি বলেন, ‘চা শিল্পে কার্বন ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। পরিকল্পনাটি পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি এর সঙ্গে বিকল্প আয়ের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আশা করছি, এটি দ্রুতই বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে।’

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

টিআরএর সম্পাদক জয়দীপ ফুকন জানিয়েছেন,’ বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে কার্বন ট্রেডিংয়ের বিপুল চাহিদা রয়েছে। তবে চা শিল্পে এখনও এ নিয়ে কাজ শুরু হয়নি। তবে টি বোর্ড যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অচিরেই চা বাগানগুলির সামনে নতুন পথ খুলে যাবে। টিআরএর পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তাও করা হবে।

উদ্ভিদ মাত্রই বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে শোষণ করে নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখার প্রবণতা আছে। একটি গাছ নিজের গুঁড়ি, পাতার পাশাপাশি মাটিতেও তা সঞ্চয় করে। সঞ্চিত ওই কার্বনের পরিমাণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাপার পদ্ধতি আছে। মূলত গাছের গুঁড়ির আকার দেখে সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণ মাপা হয়। এক বিঘা জমিতে কত গাছ লাগালে তাতে কতটা কার্বন সঞ্চয় হবে সেটা নানা মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে।’

সঞ্চিত কার্বন মাপার জন্য আমাদের দেশে এখনও খুব বেশি সংস্থা নেই। আন্তর্জাতিক স্তরের সংস্থাগুলিই ভরসা। তাদের মাধ্যমেই কার্বন বিক্রি হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছর হল আমাদের দেশে সীমিতভাবে এই ব্যবসা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ তো এখনও কয়েক যোজন দূরে। চা শিল্পের মাধ্যমে বিষয়টির বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে ঘিরে তাই সংশিষ্ট মহল আশায় বুক বাঁধছে। দেশের অন্য বাগিচা ক্ষেত্রের মধ্যে আরাকুভ্যালির কফি বাগানে কার্বন ট্রেডিং নিয়ে কিছু কাজ শুরু হয়েছে।

কার্বন ট্রেডিং বিষয়টি একটু বুঝে নেওয়া যাক। যারা কার্বন সঞ্চয় করছে তাদের সহযোগিতা করতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশের সংস্থাগুলির ওপর আন্তর্জাতিক স্তরের চাপ রয়েছে।

কার্বন ক্রেডিট সার্টিফিকেট কেনা এই সহযোগিতার প্রধান রূপ। ধরা যাক, একটি চা বাগান কার্বন সঞ্চয় প্রকল্পে নামল। গোটা বছর ধরে সঞ্চিত কার্বনের নিরিখে শংসাপত্র মিলবে। এটাই কার্বন ক্রেডিট সার্টিফিকেট।
কার্বন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে নয়া গাছ রোপণ জরুরি। গাছের বয়স অন্তত তিন বছর হতে হবে। পুরোনো গাছ হলে কার্বন সঞ্চয়ে পরিমাণ কমে যায়। উত্তরবঙ্গের চা বাগানে প্রচুর জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলিতেই পরিকল্পনামাফিক গাছ লাগিয়ে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। জার্মানির জিআইজেড ও বেঙ্গালুরুর ভিএনভি নামে দুটি খ্যাতনামা সংস্থাকে এতে কাজে লাগানো হচ্ছে। রেইনফরেস্ট অ্যালাযে্স নামে আন্তর্জাতিক আরেকটি সংস্থাও এ কাজে থাকছে।

আশার আলো দেখে জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা এনিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। চার হাজার একর জমি চিহ্নিত করে নিজেদের বাগানেই নতুন করে সবুজসৃজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, আগে বিষয়টি নিয়ে কোনও ধারণাই ছিল না। টি বোর্ড আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।