Bangladesh 50: আশা রাখব সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও দৃঢ় হবেন

শবনম হোসেন (শিক্ষিকা, পশ্চিমবঙ্গ): ডিসেম্বর , বাংলা অঘ্রান মাস আসলে বিশ্ব ইতিহাসে মাথা উঁচু করা এক জাতি বাঙালির বিজয় মাস। বাংলাদেশ পালন করছে তাদের স্বাধীনতার…

New bangladesh must maintain security of minorities

শবনম হোসেন (শিক্ষিকা, পশ্চিমবঙ্গ): ডিসেম্বর , বাংলা অঘ্রান মাস আসলে বিশ্ব ইতিহাসে মাথা উঁচু করা এক জাতি বাঙালির বিজয় মাস। বাংলাদেশ পালন করছে তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর অর্থাৎ বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী।
সেই দিনটা ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। পদ্মার ওপারের খুশির ঢেউ স্বাভাবিক ভাবেই এপারেও আছড়ে পড়েছিল। বাঙালি হৃদয়ে লেগেছিল আনন্দ দোলা।

বয়স তখন আমার সবে পাঁচ বছর। বাবা কাকাদের আবেগ, উত্তেজনা, চোখে মুখে খুশির রেশ। যুদ্ধ কী বোঝার বয়স হয়নি তবে আনন্দটুকু উপলব্ধি করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের তথা বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হলেন।

মনে পড়ে, এক দুপুরে বিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের মধ্যে চাঞ্চল্য। ঘোষণা করা হল, প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের জাতীয় কবি আর নেই। শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বত্র। তাঁর ই সৃষ্ট কবিতা- গানে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

কবির জন্মস্থান বর্ধমান (এখন পশ্চিম বর্ধমান) জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ও সারা পশ্চিমবঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। পরে জেনে ছিলাম ১৯৭২ সালের ১৩ই জানুয়ারি বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কবির ‘ চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটি রণসঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই গান আমাদের বিদ্যালয়ে নেতাজির জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবসে নিয়মিত গাওয়া হতো এবং এখনও প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা গেয়ে থাকে। মানুষে মানুষে ধর্ম বৈষম্য হানাহানি থেকে মুক্ত করতে তিনি সাম্যের গান শুনিয়েছেন। সমাজকে ধর্মের নামে বজ্জাতি থেকে কলুষমুক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা, ধর্মের নামে কুসংস্কার শোষণ ইত্যাদির বিরোধিতা করে লিখেছেন ‘ জাতের নামে বজ্জাতি ..’

অথচ আঁধার রাতে আজও আমরা হানাহানি করি। এবার দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নজরুলের দেশে, এ বড়ো লজ্জার, এ বড়ো কষ্টের, বড়ো দুঃখের। আজ ও আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে পরস্পরের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করি। পরস্পর ক্ষমা চাইতে যেন লজ্জাবোধ না করি।

কবি বলে গেছেন ‘ মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।’
যে জাতি নিজের মাতৃভাষাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছে রক্তের বিনিময়ে সেই দেশে মানব সভ্যতাকে পিছিয়ে দেওয়ার এই দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা আমাদের রুখতেই হবে।
হাজার বছরের সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন ‘গাহি সাম্যের গান ..’। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ‘মানবতা’-কে স্থান দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় উৎসবের ৫০ বছর পালনের পাশাপাশি আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার সরকার তথা প্রশাসন সদা জাগ্রত থাকবেন , ভবিষ্যতে যাতে যাতে কোন দূর্বৃত্ত এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং নিজ ধর্ম পালন তাদের মৌলিক অধিকার এবং তা সুনিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকার নয় প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এই শুভ দিনের প্রাক্কালে আমরা সবাই সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করার শপথ নিই। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে ভারতের বিজয় দিবস ও বাংলাদেশ তৈরির সুবর্ণজয়ন্তী পালন করি।
শুভেচ্ছা প্রত্যেক বাঙালিকে।