Bangladesh50: পূর্ব দিগন্তের সূর্য…ভারতে ‘হাতবদল’ নার্গিসের ঘরে ফেরার গল্প

সূরজ দাশ (মানবাধিকার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ): সালটা ২০০৫ । সবে আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচারচক্র প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছি। ওপার বাংলার (বাংলাদেশ-Bangladesh) নানান মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে…

Bangladesh50
Suraj Das
সূরজ দাশ (মানবাধিকার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ)

সূরজ দাশ (মানবাধিকার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ): সালটা ২০০৫ । সবে আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচারচক্র প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছি। ওপার বাংলার (বাংলাদেশ-Bangladesh) নানান মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে তৈরি হয়েছে সুসম্পর্ক।

রাজশাহী, যশোর, ঢাকা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বাংলাহিলি, এইসব জায়গায় প্রচুর মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। কার কথা ছেড়ে কার কথা বলব! ওপার বাংলার বাংলাহিলিতে জাহিদুল ইসলাম দাদা, ঢাকাতে দীপ্তি বল দিদি, তারিকুল ইসলাম দাদা, নাটোরে আজাদ ভাই, রাজশাহীতে রিপন সরকার, বগুড়াতে মাজেদ রহমান, জিয়া শাহিন, দিনাজপুরে অমিত দা, জয়পুরহাটের এনামুলদা, পাঁচবিবিতে আয়েশা আক্তার আপু, সহ আরো অসংখ্য মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের হাত দিয়েই আমি চিনে ফেলি ওপার বাংলার জল মাটি আকাশ। এই মানবিক মানুষগুলোর চোখ দিয়েই বাংলাদেশের সবুজ হৃদয় আমাকে জয় করে ফেলে। এই মানুষগুলো আছেন বলেই বাংলাদেশে এখনও সবুজ, সুজলাং সুফলাং শস্যশ্যামলাং।

প্রতি বছর ভারত- বাংলাদেশ শূন্যরেখায় অমর একুশে–আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন হয়ে আসছে দক্ষিণ দিনাজপুর ও বাংলাদেশের সীমান্ত চেকপোস্ট হিলিতে। এছাড়াও নানান সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান আমাদের বরাবর আবেগে ভাসিয়ে দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কথা লেখার আছে, অনেক আবেগ আছে, সে কথা কখনো বলবো অন্যত্র। এখানে একটা বাস্তব জীবনের গল্প আপনাদের সামনে রাখছি । যে গল্পের একটা অংশ আমি নিজে । গল্পের চরিত্রটির নাম বদলে রাখা আছে এখানে।

ঘরে ফেরার গল্প:
নার্গিস ! ১৭ বছর বয়স ! প্রকৃত বাপ-মায়ের পরিচয় জানে না সে । ওর বাড়ি যশোর। বড় হতে হতে একদিন দুম করে অনেক বড় হয়ে গেল নার্গিস । তারপর স্বপ্নের রাজপুত্তুরের সন্ধান। রকি ! গোপালগঞ্জে বাড়ি। নার্গিস স্বপ্নে বিভোর। রকির কাছে জানতে পারে সে সুখের রাজপ্রাসাদ তৈরি আছে ভারতের মুম্বাই শহরে। তার হাত ধরে পেট্রাপোল-বেনাপোল হয়ে সটান একদিন মুম্বই।

নার্গিস হাতবদল হয়ে গেলো। ৬০,০০০ টাকা লেনদেন। সে এখন অন্যের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। প্রাসাদ জুড়ে কেবল হাহাকার। এরকম কপাল ছিল, ভাবতেই পারেনি সে। বুক চাপড়ায়। দুঃখ যন্ত্রণাকে প্রতিদিন গলা টিপে হত্যা করে সে। গ্রামের কথা মনে পড়ে তার। ছোট ভাইবোনগুলোর কথা মনে পড়ে। বর্ষাকালে গুঁড়োমাছ। ভাইয়ার চপের দোকানের গন্ধ। পাড়ার নানি, আরও কতকার কথা মনে পড়ে। কি এক অচেনা জগতে চলে এলো! ফেরার রাস্তা জানা নেই। দুবছর হয়ে গেল। গতর আর চলে না।
“হে আল্লাহ্‌, কার ওপর আর ভরসা রাখব!” বয়স এখন কুড়ি। যৌবন কি তবে ফুরিয়ে এলো? কত হাঙর, কুমীর এলো গেলো…”।
“রাকেশ, তুম ক্যায়া মুঝে অপনা দেশ বাপস ভেজ সকতে হো? মেরি আঁখোকি তরফ দেখো,… … দেখতে পাচ্ছ আমার পদ্মার ঢেউ ???”
রাকেশ মুম্বাই থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে চাপিয়ে দিল নার্গিসকে ।
“যশোর, তুমি কতদুর? খুলনা ভালো আছো? বরিশালে বড় আপা থাকেন। ভালো আছেন আপা? আমি আইতেসি।”

সাপ-খোপ, ব্যাঙ-টিকটিকির বেড়াজাল ছিঁড়ে হাওড়া থেকে শিয়ায়লদা হয়ে বালুরঘাট। দুদিন সেখানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রয়ে। তারপর সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে নার্গিস পৌঁছে যায় মাটির কাছে।
সীমান্ত প্রহরীর নল উপেক্ষা করে হিলি রেলষ্টেশনে আনন্দে কাঁদছে নার্গিস। এ এক অন্য অনুভুতি । অন্য স্বাদ ।

আকাশের দিকে বারবার তাকিয়ে বলছে, “কত কি দেখলাম আল্লাহ্‌, আর কিছু দেখতে চাই না। কেবল আমি রকির মতন জহ্লাদদের ফাঁসি চাই আল্লাহ্‌… এই সামান্য মেহেরবানিটুকু করো, হে আল্লা।”