৮ম বেতন কমিশনের আগে কি মহার্ঘ ভাতার বকেয়া মিটবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি, ২৮ জুলাই ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance – DA) এবং মহার্ঘ ত্রাণ (Dearness Relief – DR)…

8th Pay Commission: Will Dearness Allowance Double or Drop for Central Govt Employees?

নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি, ২৮ জুলাই ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance – DA) এবং মহার্ঘ ত্রাণ (Dearness Relief – DR) এর বকেয়া (DA Arrears) নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় স্থগিত রাখা ১৮ মাসের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার অর্থ প্রদানের দাবি বারবার উঠে আসছে। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত, অর্থ মন্ত্রণালয় এই বকেয়া প্রদানের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে, ৮ম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর এই বিষয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ইঙ্গিত এবং ৮ম বেতন কমিশনের আগে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মহার্ঘ ভাতার বকেয়া: বর্তমান পরিস্থিতি
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিনটি কিস্তির মহার্ঘ ভাতা এবং মহার্ঘ ত্রাণ স্থগিত রাখা হয়েছিল। এই সময়ে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ১৭% থেকে ২৮%-এ উন্নীত হয়েছিল, কিন্তু এই বৃদ্ধির অর্থ প্রদান করা হয়নি। এই ১৮ মাসের বকেয়া প্রায় ৪৮.৬৬ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৬.৫৫ লক্ষ পেনশনভোগীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বিষয়। জাতীয় পরামর্শদাত্রী কমিটির (National Council – JCM) ৬৩তম বৈঠকে এই বকেয়া প্রদানের দাবি পুনরায় উত্থাপিত হয়েছিল। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লোকসভায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, “কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যয়ের কারণে এই বকেয়া প্রদান সম্ভব নয়।”

   

৮ম বেতন কমিশনের ঘোষণা ও বকেয়ার সম্ভাবনা
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার ৮ম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করেছে, যার সুপারিশ ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কমিশনের কাজের পরিধি (Terms of Reference – ToR) এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামোর সংশোধন নিয়ে কাজ করবে। কিছু সূত্রের মতে, ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে মহার্ঘ ভাতা শূন্যে রিসেট হবে এবং মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে। এই পরিস্থিতিতে, ১৮ মাসের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ইঙ্গিত অনুযায়ী, ৮ম বেতন কমিশনের পূর্ণ গঠন এবং সুপারিশ তৈরির জন্য ১৫ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এর মানে, ২০২৭ সালের আগে এই কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সময়ের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা প্রদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে কিনা, তা নিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নগুলো আশাবাদী। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান অবস্থান এই বকেয়া প্রদানের সম্ভাবনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

বর্তমান মহার্ঘ ভাতার অবস্থা
২০২৫ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মহার্ঘ ভাতা এবং মহার্ঘ ত্রাণ ২% বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়, যার ফলে মহার্ঘ ভাতার হার ৫৩% থেকে ৫৫%-এ উন্নীত হয়। এই বৃদ্ধি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে, এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের বকেয়া এপ্রিল ২০২৫-এর বেতনের সঙ্গে প্রদান করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮,০০০ টাকা মূল বেতনের ক্ষেত্রে মাসিক ৩৬০ টাকা বৃদ্ধি পাবে, এবং তিন মাসের বকেয়া হিসেবে ১,০৮০ টাকা প্রদান করা হবে। পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে, ৯,০০০ টাকা মূল পেনশনের জন্য মাসিক ১৮০ টাকা বৃদ্ধি এবং ৫৪০ টাকা বকেয়া প্রদান করা হবে।

২০২৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য মহার্ঘ ভাতার আরেকটি বৃদ্ধির ঘোষণা অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৫-এ প্রত্যাশিত। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI-IW) এর তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৫-এ সূচক ১৪৪.৫-এ পৌঁছালে মহার্ঘ ভাতা ৫৫% থেকে ৫৯%-এ উন্নীত হতে পারে, অর্থাৎ ৪% বৃদ্ধি। এটি ৭ম বেতন কমিশনের অধীনে সর্বশেষ মহার্ঘ ভাতার বৃদ্ধি হবে, কারণ ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে মহার্ঘ ভাতা শূন্যে রিসেট হবে।

Advertisements

বকেয়া প্রদানের সম্ভাবনা
কর্মচারী ইউনিয়নগুলো দীর্ঘদিন ধরে ১৮ মাসের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয় পরামর্শদাত্রী কমিটির বৈঠকে এই দাবি বারবার উত্থাপিত হয়েছে, এবং কিছু সূত্রের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই বকেয়া পর্যায়ক্রমে প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্ন-স্তরের কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান অবস্থান অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি ব্যয়ের চাপের কারণে এই বকেয়া প্রদান “অসম্ভব” বলে বিবেচিত হচ্ছে।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে একটি আলোচনা হতে পারে। তবে, এটি সরকারের রাজস্ব ঘাটতি এবং কল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যয়ের উপর নির্ভর করবে। যদি সরকার এই বকেয়া প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি পর্যায়ক্রমে বা এককালীন প্রদানের মাধ্যমে হতে পারে, যা প্রায় ১ কোটি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের আর্থিকভাবে উপকৃত করবে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
মহার্ঘ ভাতার বকেয়া প্রদানের বিষয়টি কেবল আর্থিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সরকার এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। কর্মচারী ইউনিয়নগুলো মনে করছে, বকেয়া প্রদান কর্মচারীদের মধ্যে সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়াতে পারে। তবে, অর্থনৈতিক চাপ এবং বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার এই বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।

অন্যদিকে, ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশে বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৩০-৩৪%, যা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮৩ থেকে ২.৪৬-এর উপর নির্ভর করবে। উদাহরণস্বরূপ, ৫০,০০০ টাকা মূল বেতনের ক্ষেত্রে নতুন বেতন ৯১,৫০০ থেকে ১.২৩ লক্ষ টাকা হতে পারে। তবে, মহার্ঘ ভাতা শূন্যে রিসেট হওয়ায় প্রকৃত বৃদ্ধি কিছুটা কম হতে পারে।

২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইঙ্গিত অনুযায়ী, ১৮ মাসের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সম্ভাবনা কম। ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং সরকারি ব্যয়ের চাপ এটিকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। বর্তমানে, কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে ঘোষিত মহার্ঘ ভাতার বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল। ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ ২০২৬ বা ২০২৭ সালে কার্যকর হলে, এটি কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে, তবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে।