পশ্চিমবঙ্গে মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২ প্রবর্তন, জানুন আপনার জমির স্বাস্থ্য

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য সুখবর! রাজ্য সরকার মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২ প্রকল্প চালু করতে চলেছে, যা কৃষকদের জমির মাটির গুণমান এবং পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য…

West Bengal Launches Soil Health Card Phase-2: Boosting Farming with Advanced Soil Testing

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য সুখবর! রাজ্য সরকার মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২ প্রকল্প চালু করতে চলেছে, যা কৃষকদের জমির মাটির গুণমান এবং পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে শুরু হওয়া মাটি স্বাস্থ্য কার্ড (Soil Health Card) প্রকল্পের প্রথম ধাপে কৃষকদের মাটির পুষ্টি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। এবার ফেজ-২-এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং সুনির্দিষ্ট সুপারিশের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে। এই প্রকল্প কৃষকদের জমির মাটির স্বাস্থ্য জানতে এবং ফসলের ফলন বাড়াতে সহায়তা করবে। এই প্রতিবেদনে আমরা মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২, এর সুবিধা এবং পশ্চিমবঙ্গে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২: কী এবং কেন?
মাটি স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্প ভারত সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম, যা ২০১৫ সালে চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের জমির মাটির পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা এবং ফসল-ভিত্তিক সার ও পুষ্টি ব্যবহারের সুপারিশ দেওয়া। ফেজ-২-এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে মাটি পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক এবং কৃষক-বান্ধব করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় মাটির ১২টি পরামিতি—পিএইচ, বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা (ইসি), জৈব কার্বন (ওসি), নাইট্রোজেন (এন), ফসফরাস (পি), পটাশিয়াম (কে), সালফার (এস), জিঙ্ক (জেডএন), বোরন (বি), আয়রন (এফই), ম্যাঙ্গানিজ (এমএন) এবং কপার (সিইউ)—পরীক্ষা করা হবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে কৃষকরা তাদের জমির জন্য উপযুক্ত ফসল এবং সার নির্বাচন করতে পারবেন।

   
West Bengal Launches Soil Health Card Phase-2: Boosting Farming with Advanced Soil Testing
West Bengal Launches Soil Health Card Phase-2: Boosting Farming with Advanced Soil Testing

পশ্চিমবঙ্গে ফেজ-২: নতুন কী আছে?
প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গে মাটি স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণে কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। ২০১৫-১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ লক্ষ কার্ড বিতরণ, কিন্তু জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত কোনো কার্ড বিতরণ করা যায়নি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ফেজ-২-এ আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং সচেতনতা প্রচারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাটি পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (এনআইসি) দ্বারা পরিচালিত মাটি স্বাস্থ্য কার্ড পোর্টাল (www.soilhealth.dac.gov.in) (www.soilhealth.dac.gov.in) এখন ২২টি ভাষায় এবং ৫টি উপভাষায় কার্ড তৈরি করছে, যাতে কৃষকরা সহজেই তথ্য বুঝতে পারেন।

এই ফেজে, মাটির নমুনা সংগ্রহের জন্য জিপিএস-ভিত্তিক রেভিনিউ ম্যাপ ব্যবহার করা হবে। সেচযুক্ত এলাকায় ২.৫ হেক্টর এবং বৃষ্টিনির্ভর এলাকায় ১০ হেক্টরের গ্রিড থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নমুনাগুলি ১৫-২০ সেমি গভীরতা থেকে ‘V’ আকৃতিতে কেটে সংগ্রহ করা হবে এবং ছায়াযুক্ত এলাকা এড়িয়ে চলা হবে। এই নমুনাগুলি রাজ্যের মাটি পরীক্ষা ল্যাবরেটরি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বা আইসিএআর-এর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে (কেভিকে) পরীক্ষা করা হবে। প্রতি নমুনার জন্য ১৯০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা সংগ্রহ, পরীক্ষা এবং কার্ড বিতরণের খরচ কভার করে।

 

কৃষকদের জন্য সুবিধা
মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২ কৃষকদের জন্য একাধিক সুবিধা নিয়ে আসছে:

Advertisements
  • ফসল নির্বাচনের সঠিক দিকনির্দেশনা: কার্ডটি মাটির পুষ্টির ঘাটতি এবং ফসল-ভিত্তিক সুপারিশ প্রদান করবে, যাতে কৃষকরা জানতে পারেন কোন ফসল তাদের জমিতে বেশি ফলন দেবে।
  • সারের সঠিক ব্যবহার: অতিরিক্ত সার ব্যবহার কমিয়ে এবং জৈব সার ও বায়ো-ফার্টিলাইজারের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষকরা খরচ কমাতে পারবেন।
  • উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: সঠিক পুষ্টি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের ফলন বাড়বে এবং মাটির উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষিত হবে।
  • ডিজিটাল সুবিধা: কৃষকরা মাটি স্বাস্থ্য কার্ড পোর্টাল থেকে তাদের রিপোর্ট ডাউনলোড করতে পারবেন এবং নিকটতম মাটি পরীক্ষা ল্যাবরেটরির তথ্য পাবেন।

পশ্চিমবঙ্গে মাটি পরীক্ষার অবকাঠামো
পশ্চিমবঙ্গে মাটি পরীক্ষার জন্য স্থির এবং মোবাইল ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে। গ্রামীণ যুব এবং ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কৃষকরা মাটি পরীক্ষা ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন করতে পারেন, যার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচের ৭৫% কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বহন করবে। এছাড়া, রাজ্য সরকার জেলা ও ব্লক-ভিত্তিক উর্বরতা মানচিত্র তৈরি করছে, যা কৃষকদের অনলাইনে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গে মাটি স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণে বিলম্ব এবং সচেতনতার অভাব ছিল। অনেক কৃষক কার্ডের তথ্য বুঝতে পারেননি বা প্রস্তাবিত সুপারিশগুলি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ফেজ-২-এ এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার সচেতনতা প্রচার, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে। এছাড়া, মাটি পরীক্ষার অবকাঠামো বাড়ানো এবং স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।

কৃষকদের জন্য করণীয়
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা মাটি স্বাস্থ্য কার্ড পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন:

  • মাটি পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা: নিকটতম মাটি পরীক্ষা ল্যাবে যোগাযোগ করুন। মাটি স্বাস্থ্য কার্ড পোর্টালে (www.soilhealth.dac.gov.in) (www.soilhealth.dac.gov.in) ল্যাবের তালিকা পাওয়া যাবে।
  • রিপোর্ট ডাউনলোড: পরীক্ষার ফলাফল পোর্টাল থেকে ডাউনলোড করা যাবে বা সরাসরি ল্যাব থেকে পাওয়া যাবে।
  • বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন।

মাটি স্বাস্থ্য কার্ড ফেজ-২ পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্প কৃষকদের জমির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করবে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে। উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে এই প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। কৃষকরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাদের জমির উর্বরতা বাড়াতে এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন।