মিলন পণ্ডা, এগরা: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা ১ নম্বর ব্লকের বরিদা কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতি নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। বিজেপি সমর্থিত সবকটি ৯টি আসনেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বার্তা দিল গেরুয়া শিবির। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত এই অঞ্চলে তৃণমূলের এমন ভরাডুবি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
গত ৯ বছর ধরে বরিদা সমবায় সমিতির কোনও নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘদিন পর শনিবার সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ছিল তীব্র উত্তেজনা। মোট ভোটার ছিলেন ৪৫২ জন, যার মধ্যে ৪৪১ জন ভোট দেন। প্রতিটি আসনে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ভোট গণনা শেষ হতেই দেখা যায়, বিজেপি সমর্থিত ৯ জন প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। শাসক দল তৃণমূল একটি আসনেও জিততে পারেনি। ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় আবির খেলা, জয় শ্রী রাম স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। বিজয়ীদের তরফে উঠে আসে রাজনৈতিক বার্তাও।
বিজেপি জেলা কমিটির সদস্য তথা জয়ী প্রার্থী স্বরূপ দাস বলেন, “যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেখানেই বিজেপি জেতে। আজকের এই ফলাফল তার বড় প্রমাণ। তরুণ কুমার মাইতিকে বিধানসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ভোটে হারাবো, বরিদা থেকেই ৩ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব।”
বিজেপি সমর্থিত অপর জয়ী প্রার্থী স্বপন দিন্দা তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি জনতার সামনে স্পষ্ট। সেই কারণেই তারা আজ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত। মানুষ উন্নয়ন ও সৎ প্রশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা এগরা-সহ গোটা রাজ্যে বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।”
এদিকে তৃণমূলের তরফে আসা প্রতিক্রিয়ায় উঠে আসে আত্মসমালোচনার সুর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শান্তনু নায়কের বক্তব্য, “আমাদের কিছু ভুলত্রুটি ছিল, তা স্বীকার করছি। তবে মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। একটা সমবায়ে হার মানেই আমরা মাটি হারিয়েছি, এটা নয়। এগরা বিধায়কের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন।”
তৃণমূল দাবি করেছে, দলীয় সমন্বয়ের অভাব এবং স্থানীয় স্তরে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এই পরাজয় হয়েছে। তবে বিজেপি বলছে, এই ফলাফল স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রাজ্যে মানুষ পরিবর্তন চাইছে। শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে বিজেপির এই জয় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বাভাস বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এই জয়ের পর বিজেপির আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। সমবায় নির্বাচনের মত একটি ছোট নির্বাচনে এমন বড় জয় ভবিষ্যতের নির্বাচনে বিজেপির সংগঠনিক শক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আগামী দিনে এই ফলাফল রাজ্য রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা বলবে সময়ই। তবে আপাতত এগরার বরিদা গেরুয়া ঝড়ে তীব্র অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির।