নবি মুম্বইয়ের পানভেল এলাকার তাক্কা কলোনিতে শনিবার একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। একটি তিন দিন বয়সী শিশুকন্যাকে (Newborn) একটি নীল রঙের ঝুড়িতে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
শিশুটির পিতামাতারা একটি হাতে লেখা নোট রেখে গেছেন, যাতে তারা তাদের দারিদ্র্যের কারণে শিশুটিকে লালন-পালন করতে অক্ষম বলে উল্লেখ করেছেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।(Newborn) এই ঘটনায় পানভেল টাউন পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) প্রাসঙ্গিক ধারায় শিশু পরিত্যাগের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
ঘটনার বিবরণ
শনিবার সকালে, তাক্কা কলোনির রাস্তার ধারে একটি ঝুড়িতে শিশুটিকে দেখতে পান স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেন। (Newborn) পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে তাদের হেফাজতে নেয় এবং তাকে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল।
ঝুড়ির মধ্যে একটি দুধের বোতল, সেরেল্যাক পাউডার, কাপড় এবং একটি হাতে লেখা নোট পাওয়া গেছে। নোটটিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল: “আমরা দুঃখিত, আমরা এই শিশুটির জন্য কিছুই করতে পারছি না, মানসিক ও আর্থিকভাবে। (Newborn) আমরা চাই না শিশুটি আমাদের মতো কষ্ট ভোগ করুক। আমাদের কোনও উপায় ছিল না।” এই নোটটি পিতামাতার আর্থিক দৈন্য এবং মানসিক অসহায়তার একটি করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।
পুলিশের পদক্ষেপ
পানভেল টাউন পুলিশ তৎক্ষণাৎ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তার স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়। পুলিশের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, শিশুটির পিতামাতার খোঁজে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষ্য সংগ্রহের মাধ্যমে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ৯১ (শিশুকে জীবিত থাকতে বাধা দেওয়ার অভিপ্রায়ে কাজ করা) এবং ধারা ৯৪ (শিশুর জন্ম গোপন করার জন্য শিশুর দেহ গোপনে নিষ্পত্তি করা) (Newborn) এর অধীনে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের মতে, এই ধরনের ঘটনায় পিতামাতারা প্রায়ই মানসিক চাপ এবং আর্থিক সংকটের কারণে এমন পদক্ষেপ নেন, তবে এটি আইনত অপরাধ।
সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
এই ঘটনা নবি মুম্বইয়ে শিশু পরিত্যাগের একটি সিরিজের সর্বশেষ ঘটনা। গত কয়েক বছরে, পানভেল এবং আশেপাশের এলাকায় একাধিক শিশু পরিত্যাগের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে নান্দগাঁও গ্রামে একটি নবজাতক কন্যা ঝোপের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, (Newborn) এবং ২০২৩ সালে একটি পাঁচ দিনের শিশুকন্যা হাসপাতালের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি সমাজে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং সামাজিক সমর্থনের ঘাটতির গভীর সমস্যাগুলির দিকে ইঙ্গিত করে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, যা ২০২৩ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, শিশু পরিত্যাগের মতো অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে। ধারা ৯১ এবং ৯৪-এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। তবে, এই ধরনের ঘটনাগুলি কেবল আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং দুঃখের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা, যিনি শিশুটিকে প্রথম দেখতে পান, বলেন, “ঝুড়িতে শিশুটির (Newborn) কান্না শুনে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। নোটটি পড়ে বোঝা গেল বাচ্চাটির বাবা মা কতটা অসহায় ছিলেন। কিন্তু এভাবে একটি শিশুকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া কোনও সমাধান নয়।” অনেকে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য আরও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার প্রয়োজন।
স্থানীয় এনজিও ‘স্বপ্নালয়’, যেটি মেয়েদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল পরিচালনা করে, শিশুটির দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে, “আমরা শিশুটির যত্ন নিতে প্রস্তুত এবং তাকে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ দেওয়ার চেষ্টা করব।” এই ধরনের সংস্থাগুলি পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে সমস্যার মূল কারণ সমাধানের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
চেতন শর্মার ভুলে গাভাসকরের সতর্কবাণী! সেই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা পেলেন গম্ভীরের ছাত্ররা?
সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা
এই ঘটনা ভারতে দারিদ্র্য এবং সামাজিক অসমতার গভীর সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশু পরিত্যাগের মতো ঘটনা রোধ করতে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য আর্থিক সহায়তা, শিশু কল্যাণ প্রকল্প, এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বৃদ্ধি।
মহারাষ্ট্র সরকারের ‘মহিলা ও শিশু কল্যাণ বিভাগ’ ইতিমধ্যে ‘মিশন শক্তি’ এবং ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র মতো প্রকল্প চালু করেছে, তবে এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন এখনও অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল।
এছাড়াও, সামাজিক (Newborn) সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা প্রয়োজন, যাতে পিতামাতারা বুঝতে পারেন যে শিশু পরিত্যাগের পরিবর্তে তারা সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কাছে শিশুকে হস্তান্তর করতে পারেন। ভারতে ‘শিশু গ্রহণ কেন্দ্র’ এবং ‘ক্র্যাডল পয়েন্ট’ প্রকল্প রয়েছে, যেখানে পিতামাতারা বেনামে তাদের শিশুকে নিরাপদে রেখে আসতে পারেন।
নবি মুম্বইয়ের (Newborn) এই ঘটনা সমাজের একটি গভীর ক্ষতকে প্রকাশ করে। শিশুটির পিতামাতার নোট তাদের অসহায়তার একটি করুণ চিত্র তুলে ধরলেও, এটি একটি অপরাধমূলক কাজ। পুলিশের তদন্ত এবং শিশুটির ভবিষ্যৎ যত্ন নিয়ে জনগণের দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে সরকার, সমাজ এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিশুটির জন্য ন্যায়বিচার এবং একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এখন সমাজের দায়িত্ব।