৫ মাসে পালিয়েছে ৫০০ বউ! বারাসতে পরকীয়ার রমরমা

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত (Barasat) পুলিশ জেলায় বিগত পাঁচ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় ৫০০ জন গৃহবধূ! প্রশাসনের তরফে এই তথ্য সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা…

500 Married Women Missing in Barasat in 5 Months

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত (Barasat) পুলিশ জেলায় বিগত পাঁচ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় ৫০০ জন গৃহবধূ! প্রশাসনের তরফে এই তথ্য সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলা জুড়ে। প্রতিদিনের মতো নিখুঁত সংসার সামলানো, সন্তান মানুষ করা, রান্নাঘরের কাজ সামলে যারা একসময় ছিলেন সমাজের চোখে আদর্শ গৃহবধূ—আজ তারাই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে পড়ছেন প্রেমের মোহে। পরকীয়ার টানে তাঁরা ঘর ছাড়ছেন, স্বামী-সন্তান ফেলে নতুন ‘স্বপ্নের রাজপুত্র’-এর হাত ধরে পাড়ি দিচ্ছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

মোবাইল-সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জন্ম নিচ্ছে ‘ভার্চুয়াল প্রেম’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার অতিনির্ভরতা একদিকে যেমন বাড়িয়ে তুলছে সাইবার অপরাধ, অন্যদিকে তা বিপদজনকভাবে ঘনীভূত করছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ব্যস্ত কর্মজীবন, শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব, আর সেই ফাঁক গলে সামাজিক মাধ্যমে গড়ে ওঠা ‘ভার্চুয়াল’ বন্ধুত্ব—সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক অদ্ভুত প্রেমের ফাঁদ। কেউ কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে, কেউ বা বিদেশে, আর কেউ বা সকাল থেকে রাত অবধি অফিসেই আটকে—এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীদের অনেকেই একাকীত্বে ভুগে পড়ছেন ‘পরপুরুষ’ নামক আবেগী ছায়ার মোহে।

   

পুলিশের তথ্যেই উদ্বেগ
বারাসত পুলিশ জেলার এক সূত্রে খবর, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত, এই জেলায় মোট ৫৩৬ জন যুবতী নিখোঁজ হয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই বিবাহিত গৃহবধূ! তাদের কেউ স্বামীর পরিচিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে, কেউবা কোনও ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠিত যুবকের হাত ধরে ঘর ছেড়েছেন। অনেকেই পেছনে ফেলে গিয়েছেন ছোট ছোট সন্তানকে। কয়েকজন গৃহবধূর বিয়ে হয়েছে আড়াই বছরেরও বেশি সময় আগে—তবু সংসারের টান তাঁদের আর ধরে রাখতে পারেনি।

স্বামীরা হতবাক, পুলিশ অসহায়
অনেক স্বামীই স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু সমস্যার জায়গা এইখানেই—নিখোঁজদের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পুলিশ জোর খাটাতে পারছে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার পরেও, তাঁরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন—”আমি প্রাপ্তবয়স্ক, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নেব।” এতে করে আইনি জটিলতা তো বাড়ছেই, সেইসঙ্গে পুলিশের হাতও কার্যত বাঁধা পড়ে যাচ্ছে।

অনেকেই ফিরেছেন, কিন্তু অনেকে আর ফিরতে চান না
পুলিশের দাবি, এই পাঁচ মাসে নিখোঁজ হওয়া ৫০০ জন গৃহবধূ ও ৩৬ জন অবিবাহিতা যুবতীর মধ্যে মোট ২০০ জন ফিরে এসেছেন। কিন্তু যাঁদের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যেও অনেকে নিজে ফিরে আসেননি। পরিবার ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায় তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আবার অনেকে ফিরতেও অস্বীকার করেছেন। এক পুলিশ কর্তা জানান, “নিখোঁজদের খোঁজে আমরা তৎপর। তবে প্রাপ্তবয়স্ক গৃহবধূদের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু আইনগত সীমাবদ্ধতা আছে।”

Advertisements

নাবালক-নাবালিকা নিখোঁজের সংখ্যাও চিন্তার
গৃহবধূদের পাশাপাশি বারাসত পুলিশ জেলায় নাবালক-নাবালিকাদের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে ৩৩ জন নাবালক ও ১৯৯ জন নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন নাবালক ও প্রায় ১৭০ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। যদিও এখানেও এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

পরিবারের লজ্জা, সমাজের চাপ
অন্যদিকে, স্বামীরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চাইছেন। পুলিশের কাছে তাঁরা কাতর আর্জি জানাচ্ছেন যেন তাঁদের বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসে। সমাজে ‘পরকীয়া’ নিয়ে ছুঁতমার্গের কারণে পরিবারগুলির মানসিক চাপ আরও দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে।

সমাধানের পথ?
মনোবিদদের মতে, এই সমস্যার শিকড় সমাজের ভেতরে অনেক গভীরে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মানসিক বোঝাপড়া, সম্পর্কের স্বচ্ছতা ও পারিবারিক সময় কাটানো—এই চারটি দিকেই গুরুত্ব না দিলে এমন পরিণতি চলতেই থাকবে। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি ও সম্পর্কের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি বলে মত তাঁদের।

বারাসতে যা ঘটছে, তা শুধু একটি জেলার সমস্যা নয়। বরং এটি এক গভীর সামাজিক অসুস্থতার প্রতিচ্ছবি—যা সময় থাকতেই চিনে নেওয়া প্রয়োজন।