রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ফের রাজনৈতিক তোলপাড়। এবার তাঁর নিশানায় পড়েছে পবিত্র জগন্নাথধাম। তিনি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে “বিনোদন পার্ক” বলে অভিহিত করায় প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। দাবি, সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) হিন্দু ধর্ম, ভক্তি, সংস্কৃতি এবং কোটি কোটি জগন্নাথভক্তের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, সুকান্ত যদি ন্যূনতম লজ্জাবোধ রাখেন, তবে তাঁকে অবিলম্বে এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, এই মন্তব্য কেবল বাংলার অপমান নয়, এটি এক পবিত্র ধর্মস্থান ও তার সঙ্গে যুক্ত বিশ্বাসেরও অসম্মান। জগন্নাথধাম বাংলার সাংস্কৃতিক গর্ব, ঐক্য ও ভক্তির প্রতীক। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর রথযাত্রায় অংশ নিতে আসেন। সেটিকে বিনোদনের স্থান বলে অভিহিত করা অত্যন্ত কুরুচিকর ও অবমাননাকর।
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একাধিক পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। প্রশ্ন তুলেছে— “সুকান্ত মজুমদার, জগন্নাথধাম আপনাকে এতটা বিরক্ত করে কেন? মন্দির, ভক্তি আর ঐতিহ্য আপনাদের অসহ্য লাগছে?” বিজেপির রাজনীতির মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে বিভাজন ও ঘৃণার প্রচার, আর সেই কারণেই পবিত্র স্থানগুলি নিয়েও কটাক্ষ করতে পিছপা হন না বিজেপি নেতারা— এমনটাই অভিযোগ করেছে ঘাসফুল শিবির।
এই প্রথম নয়, সুকান্ত মজুমদার এর আগেও বিভিন্ন মন্তব্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিছুদিন আগেই তিনি কলকাতার সোনাগাছি অঞ্চলের যৌনকর্মীদের প্রসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে “সেক্স ওয়ার্কার” মন্তব্য করে নিন্দার মুখে পড়েন। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই মন্তব্য নারী বিদ্বেষ ও সমাজবিরোধী মানসিকতারই প্রতিফলন। এমনকি, বিজেপির অন্য নেতাদেরও নারী ও দলিত বিরোধী মন্তব্যের নজির রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। প্রসঙ্গত, আগে এক বিজেপি নেতা রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন।
তৃণমূলের আরও অভিযোগ, বিজেপির মধ্যে যে নারীবিদ্বেষী ও সংখ্যালঘুবিরোধী মনোভাব রয়েছে, তা এই ধরনের বারংবার হওয়া মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা বলেছে, যারা হিন্দু ধর্মের ধ্বজা ওড়ায়, তারাই আজ ধর্মীয় স্থানকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করছে। এদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে একের পর এক।
এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই মন্তব্য তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যে আবার হিন্দু ভক্ত শ্রেণির কাছেও নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা পরিষ্কার বলতে চাইছে— হিন্দুধর্ম নিয়ে প্রকৃত শ্রদ্ধাশীল তারাই, যারা ভক্তি ও ঐতিহ্যের মর্যাদা বোঝে।
সার্বিকভাবে, সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। এখন দেখার, বিজেপি দল এই মন্তব্য থেকে কীভাবে পিছু হটে এবং আদৌ ক্ষমা চাওয়া হয় কি না।