কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই স্পষ্ট হয়ে গেল, শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে জনমতের ঝোঁক আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলের সঙ্গে এই উপনির্বাচনের তুলনা করলে সেটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই তুলনামূলক বিশ্লেষণই সামনে এনেছেন তৃণমূলের আইটি সেল প্রধান ও যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেওয়া একটি বিশ্লেষণে দেবাংশু জানান, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের হার ছিল ৪৩.৮ শতাংশ। অথচ উপনির্বাচনের গণনার কয়েক রাউন্ড শেষ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশের আশেপাশে। অর্থাৎ প্রায় ১৬ শতাংশেরও বেশি ভোটে লাফ। এটি নিঃসন্দেহে তৃণমূলের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেবাংশু তাঁর পোস্টে ব্যাখ্যা করেছেন, এই ভোটবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে বিজেপির ভোটব্যাংকে ভাঙন। তিনি দাবি করেন, বিজেপির যে হিন্দু ভোট আগে শক্তভাবে তাদের সঙ্গে ছিল, এবার তার একটি বড় অংশ তৃণমূলের দিকে সরে এসেছে। তাঁর কথায়, “বিজেপি তাদের নিজস্ব ঘাঁটি ধরে রাখতে পারেনি। মানুষের আস্থা বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমুখী নীতিতে। ধর্ম নয়, কাজই মানুষের প্রধান বিবেচ্য হয়ে উঠছে।”
তবে এই উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের অবস্থানে বিশেষ কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। দেবাংশুর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তাদের ভোটপ্রাপ্তির হার প্রায় স্থিতিশীল থেকেছে। ফলে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যেই হচ্ছে, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছিল গণনা। একেকটি রাউন্ড গণনা শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থী ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে ওঠে বেলা বাড়তেই। প্রতিটি রাউন্ড শেষে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান বাড়তে থাকে, আর সেই চিত্রই তুলে ধরেছেন দেবাংশু।
তিনি আরও বলেন, “এই জয় শুধু একজন প্রার্থীর নয়, এই জয় বাংলার মানুষের, যারা উন্নয়নের পাশে থেকেছেন। ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের ফলাফলের তুলনায় এই উপনির্বাচনের ফল আমাদের রাজনৈতিক পথে আরও দৃঢ় করবে।”
এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ফলাফল শুধু তৃণমূলের জন্য ইতিবাচক বার্তাই নয়, একই সঙ্গে বিজেপির জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেতও বটে। কারণ, হিন্দু ভোটে ভাঙন বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। বিশেষত, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক কেন্দ্রে বিজেপি যে ভোটব্যাংকে ভর করে দাঁড়িয়েছিল, তার উপর চাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে এই উপনির্বাচনের ফলাফলে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, তৃণমূলের রাজ্যস্তরের একাধিক নেতা দেবাংশুর এই বিশ্লেষণকে সমর্থন করে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ারও করেছেন। তাদের মতে, “মানুষ কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, অপপ্রচার নয়।”
সবমিলিয়ে, কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের এই ফলাফল যে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় তৈরি করতে পারে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর সেই পথনির্দেশ হিসেবে দেবাংশুর বিশ্লেষণ ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে।