ক্ষমতায় এলে উদ্ধার করবেন বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা (Indian Black Money)—এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসেন। তখনকার দাবি ছিল, সেই উদ্ধারকৃত টাকার মাধ্যমে প্রত্যেক ভারতীয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা হবে এবং দেশের বিকাশে তা ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি কেবল একটি রাজনৈতিক নির্বাচনী স্লোগানের মতোই থেকে গেছে। কালো টাকা উদ্ধারের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের কাছে তোলা হয়েছিল, তবে কেন্দ্রীয় সরকার কৌশলীভাবে দায় এড়িয়ে যায়। এখনও বিরোধী দলগুলো ১৫ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সরকারকে কটাক্ষ করে। আর এই পরিস্থিতিতে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ভূত হয়েছে—কালো টাকা উদ্ধারের পরিবর্তে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত হচ্ছে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে ৩.৫৪ বিলিয়ন সুইস ফ্র্যাঙ্ক (প্রায় ৩৭,৬০০ কোটি টাকা) পৌঁছেছে। এটি ২০২১ সালের পরে সর্বোচ্চ পরিমাণ। বিস্ময়কর বিষয় হলো, এই টাকার মাত্র ১০ শতাংশই সরাসরি গ্রাহকদের জমা থেকে এসেছে; বাকি অংশ ব্যাংক চ্যানেল এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে। এই তথ্য বহু প্রশ্ন তুলেছে—কি ভাবে এত বড় পরিমাণ টাকা বিদেশে পৌঁছাচ্ছে এবং কেন এই টাকা দেশের উন্নতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে না?
ভারতের কালো টাকা বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে অবৈধভাবে জমা টাকার পরিমাণ ১.০৬ থেকে ১.৪০ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে। তবে সুইস কর্তৃপক্ষ এবং সুইস ব্যাঙ্কার্স অ্যাসোসিয়েশন এই তথ্যকে ভুল ও অযথা বলে প্রতিবাদ করে। তাদের দাবি, ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমা টাকার মোট পরিমাণ মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। এই বৈষম্য তথ্য সত্ত্বেও, ২০২৪ সালের এই তিনগুণ বৃদ্ধি সরকারের কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
২০১৬ সালে নোট বাতিলের মাধ্যমে কালো টাকা রোধের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এর ফলাফল সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, নোটবন্ধীকরণ কালো টাকাকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারেনি; বরং এটি বিদেশে পাঠানোর একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে। সুইস ব্যাংকের তথ্য এই ধারণাকে সমর্থন করে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া, ভারত সরকার ২০১০ সাল থেকে সুইসের সঙ্গে ডবল ট্যাক্সেশন এড়ানোর চুক্তি পুনর্বিবেচনা করে কালো টাকা নিয়ে তদন্তের সুযোগ করেছে, তথাপি ফলাফল তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ কেউ মজা করে বলছেন, “১৫ লক্ষ টাকা দেশে আসার পরিবর্তে, সুইস ব্যাংকে ৩৭,৬০০ কোটি টাকা গেছে!” অন্যরা সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই টাকার প্রবাহ বন্ধ করতে বেশি কঠোর আইনি পদক্ষেপ এবং আন্তরিক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি এখন অতীতের কথা হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে, আর সুইস ব্যাংকে টাকা জমার এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক নীতি এবং ভ্রষ্টাচার নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। জনগণ এখন অপেক্ষা করছেন, সরকার কীভাবে এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।