DA: সুপ্রিম নির্দেশের আগে ২৫% ডিএ মেটাবে রাজ্য সরকার

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ (DA) ইস্যুতে ফের নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানো সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ…

major-financial-changes-impact-daily-life-from-march-2025

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ (DA) ইস্যুতে ফের নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানো সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে নবান্ন। যদিও এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতে ‘মডিফিকেশন’ চেয়ে আবেদন করেছে রাজ্য, তবে তার শুনানির দিন এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। তার আগেই আদালত অবমাননার পরিস্থিতি এড়াতে এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ আংশিকভাবে মানতে প্রস্তুত সরকার।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কী বলেছে?
সাম্প্রতিক একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তাদের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ–র অন্তত ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে। আদালত স্পষ্ট জানায়, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার হিসেবে ডিএ প্রদান অত্যাবশ্যক। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়তে থাকে, কারণ বহু বছর ধরে এই বকেয়া ডিএ ইস্যু চলছিল।

   

রাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ
শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে ‘মডিফিকেশন পিটিশন’ দাখিল করে। অর্থাৎ, তারা চায় যে, পূর্বের আদেশ কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন করে পর্যালোচনা করা হোক। তবে এখনো পর্যন্ত সেই আবেদনের শুনানি শুরু হয়নি। এই অবস্থায় আদালত অবমাননার অভিযোগ যাতে না ওঠে, সেই কারণে অন্তর্বর্তীকালীনভাবে ২৫ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ করার রূপরেখা তৈরি করছে সরকার।

সুপ্রিম কোর্টে সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ বাবদ যে টাকা দিতে হবে বলে রাজ্য জানিয়েছে, সেই হিসেবে ২৫ শতাংশের জন্য লাগবে প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ৩০ জুনের মধ্যে এই টাকা দিতেই হবে রাজ্যকে। সূত্রের দাবি, এই টাকার একাংশ জোগাড়ের জন্য রাজ্য সরকার খোলা বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছে। অর্থ দপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্যে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে এ ছাড়া রাজ্য সরকারের কাছে বিকল্প পথ নেই।

সূত্রের দাবি, আপাতত ঋণপত্র ছেড়ে খোলা বাজার থেকে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা তোলার প্রস্তাব বিবেচনা করছে রাজ্য। এই ঋণের টাকা খরচ কী ভাবে করা যাবে, আইনে তার নির্দিষ্ট কোনও বিধি নেই। প্রয়োজন মতো সরকার এই টাকা মূলধনী বিনিয়োগে বা কর্মচারীদের বেতন মেটাতে খরচ করতে পারে। চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য বাজেটে খোলা বাজার থেকে ৮১ হাজার ৯৭২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

Advertisements

অর্থ দফতরের প্রস্তুতি
নবান্ন সূত্রে খবর, অর্থ দফতর ইতিমধ্যেই একটি সম্ভাব্য বেতন কাঠামোর হিসাব তৈরি করছে, যাতে অন্তত ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ ধাপে ধাপে পরিশোধ করা যায়। এটি একবারে না দিয়ে কিস্তি আকারে মেটানো হতে পারে, যাতে রাজ্যের আর্থিক ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়া, এই অর্থ বরাদ্দের জন্য বিশেষ বাজেট ব্যয় পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।

কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন অবশ্য এই পদক্ষেপকে বিলম্বিত ন্যায় হিসেবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, বকেয়া ডিএ সম্পূর্ণ মিটিয়ে দিতে হবে এবং কেন্দ্রের অনুরূপ হারে ডিএ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ডিএ নিয়ে বহুদিন ধরে আন্দোলন ও মামলার মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছে কর্মচারীদের।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে। তাঁদের অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ না থাকলে রাজ্য কোনও পদক্ষেপই নিত না।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অন্তত ২৫ শতাংশ ডিএ বকেয়া মেটানোর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। আদালতের অবমাননা এড়াতে এবং রাজ্যের ভাবমূর্তি রক্ষায় এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। তবে কর্মচারীদের দাবি পূর্ণমাত্রায় কতটা মেটানো হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। এখন নজর থাকবে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকেই।