পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা (malviya) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসিত ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প, যা রাজ্যের গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেয়, তা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের (malviya) একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, এই প্রকল্পটি কেবলমাত্র দুর্নীতির একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে গরিব রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায় এবং তার মালিকানাধীন উত্তর কলকাতার সিনথি এলাকার সরজু নার্সিং হোম।
West Bengal desperately needs Ayushman Bharat!
Mamata Banerjee’s so-called Swasthya Sathi scheme is nothing but a scam in the name of healthcare — ineffective, unaccountable, and a tool to loot poor patients.
Here’s a glaring example:
TMC MLA from Serampore, Dr. Sudipta Roy,… pic.twitter.com/ucTd77HK4B— Amit Malviya (@amitmalviya) June 18, 2025
স্বাস্থ্য সাথী: প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ২০১৬ সালে চালু হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা। এই প্রকল্পের আওতায়, প্রতিটি পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে, এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত (malviya) প্রকল্পের চেয়ে উন্নত এবং রাজ্যের মানুষের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেছেন, “আয়ুষ্মান ভারতের প্রয়োজন নেই, আমাদের স্বাস্থ্য সাথীই যথেষ্ট।”
কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্যরকম। সম্প্রতি উঠে আসা অভিযোগগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ার কথা। বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের (malviya) পোস্টে বলা হয়েছে, শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায়ের মালিকানাধীন সরজু নার্সিং হোমে একজন রোগীকে, যিনি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় ভর্তি হয়েছিলেন, অর্থ প্রদানের জন্য হুমকি দেওয়া হয়। তাকে বলা হয়, টাকা না দিলে তার চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
দুর্নীতির অভিযোগ: ডা. সুদীপ্ত রায় ও সরজু নার্সিং হোম
ডা. সুদীপ্ত রায় শ্রীরামপুরের একজন প্রভাবশালী তৃণমূল বিধায়ক। তিনি উত্তর কলকাতার সিনথি এলাকায় অবস্থিত সরজু নার্সিং হোমের মালিক। এই নার্সিং হোমটি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, এই প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে(malviya)। এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় ভর্তি একজন রোগীকে জোরপূর্বক অর্থ দাবি করা হয়েছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়, বরং রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই ধরনের অভিযোগ বারবার শোনা যাচ্ছে।
এই অভিযোগগুলি রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবকে তুলে ধরে। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের তহবিল কোথায় ব্যয় হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন যে, এই প্রকল্পটি তৃণমূল নেতাদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যারা রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জন করছে।
আয়ুষ্মান ভারত: পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন প্রয়োজন?
কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। এই প্রকল্পের আওতায়, দেশের ৫০ কোটিরও বেশি মানুষকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়(malviya)। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দাবি, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পই রাজ্যের জন্য যথেষ্ট। ফলে, রাজ্যের প্রায় ৪.৬৬ কোটি মানুষ এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বিজেপি নেতারা বারবার দাবি করেছেন যে, আয়ুষ্মান ভারত পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হলে, রাজ্যের গরিব মানুষ স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। অমিত মালব্যের পোস্টে বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে আয়ুষ্মান ভারতের জরুরি প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প একটি কেলেঙ্কারি, যা অকার্যকর এবং গরিব রোগীদের লুট করার হাতিয়ার।”
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং কঠোর তদারকি ব্যবস্থা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে দৃশ্যমান নয়। এই প্রকল্পের আওতায়, রোগীরা দেশের যেকোনো নিবন্ধিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন, এবং তাদের কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। এটি রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি দূর করতে পারে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্ক (malviya)
এই অভিযোগগুলির প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, অতীতে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সমালোচনার জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন যে, বিজেপি রাজ্যের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগ উপেক্ষা করা যায় না। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তাদের প্রচারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা দাবি করছেন, “তৃণমূলের শাসনকাল শেষ। ২০২৬ সালে বিজেপি সরকার গঠন করবে এবং আয়ুষ্মান ভারত বাস্তবায়ন করবে।”
ইলিশের মরশুম শুরু, বাজারে এল প্রথম রুপোলি ইলিশ, দাম নিয়ে চমক!
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একটি গুরুতর সংকটের মুখোমুখি। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প, যা গরিব মানুষের জন্য আশার আলো হওয়ার কথা ছিল, তা দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সরজু নার্সিং হোমের ঘটনা এই প্রকল্পের ব্যর্থতার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। রাজ্যের মানুষ স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারী।
আয়ুষ্মান ভারতের (malviya) মতো একটি প্রকল্প এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, রাজ্য সরকার কি এই অভিযোগগুলির তদন্ত করবে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংস্কার করবে, নাকি রাজনৈতিক স্বার্থে এই সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করা হবে?