বাঙালির পাতে রুপোলি আনন্দ! দিঘা মোহনা বাজারে ১৫ টন ইলিশের আমদানি

মিলন পণ্ডা, দিঘা: বাঙালির ভোজন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ইলিশ মাছ (Hilsa Fish)। এই রুপোলি মাছের জন্য বাঙালির মনের উৎসাহ কখনো কমে না। গত বুধবার সকালে…

Digha Mohana Market Sees 15 Tons of Hilsa Fish in June 2025

মিলন পণ্ডা, দিঘা: বাঙালির ভোজন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ইলিশ মাছ (Hilsa Fish)। এই রুপোলি মাছের জন্য বাঙালির মনের উৎসাহ কখনো কমে না। গত বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা মোহনা বাজারে এই ইলিশ মাছের বাম্পার ফলন দেখা গেছে। প্রায় ১৫ টন ইলিশ নিয়ে একাধিক মৎস্যজীবীর ট্রলার বাজারে পৌঁছেছে, যা স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। বাজারে ইলিশ কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে, এবং ভোজন রসিক বাঙালির মুখে ফুটেছে খুশির হাসি।

দিঘা মোহনা বাজার, যেখানে চম্পা নদী বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে, তা মৎস্যজীবীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ নিলামে বিক্রি হয়, যা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছে যায়। এই বছরের জুন মাসে ইলিশের এই বিপুল পরিমাণ আমদানি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বুধবার সকালে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবং ১.২ কেজি ওজনের ইলিশের দাম পড়েছে ১,৫০০ টাকা। এই দাম সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সাশ্রয়ী হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল উল্লেখযোগ্য।

   

দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানিয়েছেন, “আজ দিঘা মোহনা বাজারে প্রায় ১০-১৫ টন ইলিশ এসেছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় কিছু ট্রলার ফিরে এসেছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে কোনো সতর্কবার্তা না থাকলেও সমুদ্র উত্তাল থাকায় মৎস্যজীবীরা ফিরে এসেছেন। তবে আমরা আশা করছি এই বছর ইলিশের ফলন ভালো হবে। কিছু ট্রলার এখনও ফিরে আসেনি, তবে আমরা আশাবাদী যে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি বাঙালির পাতে ইলিশ পৌঁছে দেওয়া। পর্যটকদের জন্যও আমরা সহজে মাছ কেনার ব্যবস্থা করে রেখেছি।”

মৎস্যজীবী অনন্য বর বলেন, “আজ আমাদের কাঁটাতে ইলিশ মাছ প্রথম বিক্রি হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দিনে আরও বেশি পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে।” তাঁর এই আশাবাদ বাজারের অন্যান্য মৎস্যজীবীদের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। দিঘা মোহনা বাজারে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ মেট্রিক টন মাছ বিক্রি হয়, যার মধ্যে ইলিশ, পমফ্রেট, চিংড়ি, কাঁকড়া, ক্যাটফিশ, টুনা এবং শুঁটকি মাছ উল্লেখযোগ্য। এই বাজারটি দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডি.এফ.এফ.টি.এ.) দ্বারা পরিচালিত হয়, যার ১,৪২৫ জন সদস্য এবং প্রায় ২,০০০ মাছ ধরার নৌকা রয়েছে।

Advertisements

দিঘা মোহনা বাজার শুধু মাছ বিক্রির জায়গা নয়, এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রও। পর্যটকরা এখানে এসে সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং সামুদ্রিক মাছের বিভিন্নতা দেখে মুগ্ধ হন। তবে, বাজারের প্রবেশপথ কিছুটা কর্দমাক্ত এবং মাছের গন্ধের কারণে কিছু পর্যটকের জন্য এটি অসুবিধাজনক হতে পারে। তবুও, এই বাজারের জনপ্রিয়তা কমেনি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা এখান থেকে তাজা মাছ কিনে নিয়ে যান। বিশেষ করে ইলিশের এই আমদানি বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে নতুন উৎসাহ যোগ করেছে।

এই বছর ইলিশের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। দিঘা মোহনা বাজারের এই ব্যস্ততা এবং ইলিশের প্রাচুর্য বাঙালির ভোজন সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। পর্যটকদের জন্য এই বাজারে মাছ কেনার পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ করার একটি সুযোগ।