অয়ন দে, কোচবিহার: জেলা শহরের এক তরুণ উদ্যোক্তা শুভঙ্কর রায় পদ্ম চাষের (Lotus Farming) মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের কৃষি জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছেন। পদ্মফুল, যা শুধু সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক নয়, এখন শুভঙ্করের হাত ধরে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এক নতুন পথও হয়ে উঠছে। বাড়ির ছাদে একটি ছোট গামলায় শুরু হওয়া এই যাত্রা এখন স্বপ্নের মাঠে পৌঁছেছে, যা উত্তরবঙ্গের কৃষকদের জন্য একটি প্রেরণার উদাহরণ। এই প্রতিবেদনে আমরা শুভঙ্করের এই যাত্রা, পদ্ম চাষের সম্ভাবনা, বাজারের চাহিদা এবং এক্স-এ ফ্যান প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
Read Hindi: कोचबिहार में शुभंकर की कमल खेती से सपनों की शुरुआत!
যাত্রার শুরু
শুভঙ্কর রায়, কোচবিহারের একজন সাধারণ যুবক, যিনি সামাজিক মাধ্যমে পদ্ম চাষের ভিডিও দেখে এই কাজে উৎসাহিত হন। তিনি বলেন, “আমি প্রথমে ইউটিউবে পদ্ম চাষের ভিডিও দেখি। ফুলের সৌন্দর্য এবং এর চাষের সহজ পদ্ধতি আমাকে আকর্ষণ করে। তখন ভাবি, বাড়িতেই ছোট করে শুরু করি।” এই ভাবনা থেকেই তিনি বাড়ির ছাদে একটি ছোট গামলায় পদ্ম চাষ শুরু করেন। প্রথমদিকে এটি ছিল শুধুই শখের ব্যাপার। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি লক্ষ্য করেন, তার চাষ করা পদ্ম গাছগুলো ভালোভাবে ফুল দিচ্ছে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
শুভঙ্করের এই ছোট উদ্যোগ ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক রূপ নিতে শুরু করে। তিনি বুঝতে পারেন যে পদ্মফুলের বাজারে চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে পূজা-অর্চনা এবং সাজসজ্জার কাজে। তিনি বলেন, “পদ্মফুলের চাহিদা সারা বছরই থাকে। বিশেষ করে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজার সময় এর চাহিদা বাড়ে। এছাড়া, ফুলের পাপড়ি ও বীজেরও বাজারে দাম রয়েছে।”
পদ্ম চাষের সুবিধা
পদ্ম চাষে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। শুভঙ্কর জানান, “একটি গামলায় পদ্ম চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। মাটি, জল, এবং সামান্য সারের প্রয়োজন। তবে যত্ন ও ধৈর্য দরকার।” তিনি কোচবিহারের জলবায়ু এবং মাটির গুণমানকে এই চাষের জন্য উপযোগী মনে করেন। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের জলাভূমি এবং পুকুরগুলো পদ্ম চাষের জন্য আদর্শ। শুধু সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।”
বর্তমানে শুভঙ্কর ছোট পরিসরে চাষ করলেও তিনি ইতিমধ্যে আয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তিনি স্থানীয় বাজারে পদ্মফুল বিক্রি করছেন, এবং পূজার সময় এর চাহিদা তাকে আরও উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেন, “একটি পদ্মফুল ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। বড় পরিসরে চাষ করলে লাভ আরও বাড়বে।”
উত্তরবঙ্গে পদ্ম চাষের সম্ভাবনা
উত্তরবঙ্গে পদ্ম চাষ এতদিন প্রায় অচেনা ছিল। দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায়, যেমন হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর, পদ্ম চাষ বাণিজ্যিকভাবে হলেও, উত্তরবঙ্গে এটি নতুন। শুভঙ্করের এই উদ্যোগ এই অঞ্চলে পদ্ম চাষের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উত্তরবঙ্গের জলাভূমি এবং পুকুরগুলো এই চাষের জন্য আদর্শ। তবে, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সরকারি সহায়তার প্রয়োজন।
কোচবিহারের কৃষি দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “পদ্ম চাষ কম খরচে বেশি লাভজনক হতে পারে। আমরা শুভঙ্করের মতো উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।” শুভঙ্কর নিজেও অন্য কৃষকদের এই চাষে উৎসাহিত করতে চান। তিনি বলেন, “আমি চাই আমার গ্রামের আরও মানুষ এই চাষে যুক্ত হন। এতে আমাদের অর্থনীতি মজবুত হবে।”
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পদ্ম চাষে সম্ভাবনা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শুভঙ্কর বলেন, “ফুলের সংরক্ষণ এবং পরিবহন একটি সমস্যা। এছাড়া, বাজারে প্রতিযোগিতা রয়েছে।” তিনি আরও বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন এবং সরকারি ভর্তুকি ও প্রশিক্ষণের আশা করছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন একটি পদ্ম চাষের ফার্ম তৈরি করা, যেখানে অন্য কৃষকরাও কাজ করতে পারবেন।”
সম্ভাব্য প্রভাব
শুভঙ্করের এই উদ্যোগ উত্তরবঙ্গে পদ্ম চাষের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। এটি কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে। যদি সরকার এবং কৃষি দপ্তর এই উদ্যোগকে সমর্থন করে, তবে উত্তরবঙ্গে পদ্ম চাষ একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে।
শুভঙ্কর রায়র ছোট গামলায় শুরু হওয়া পদ্ম চাষের যাত্রা এখন স্বপ্নের মাঠে পৌঁছেছে। তার এই উদ্যোগ শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং উত্তরবঙ্গের কৃষি জগতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। সঠিক দিকনির্দেশ ও সহায়তা পেলে, শুভঙ্করের এই পদ্ম চাষ অন্য যুবকদেরও প্রেরণা দিতে পারে।