২০ জুন, ২০২৫ থেকে লিডসে শুরু হতে যাওয়া ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শুভমন গিলের (Shubman Gill) নেতৃত্বে তরুণ ভারতীয় দল (Indian Cricket Team) ইংল্যান্ডের (England) মাটিতে ১৮ বছরের টেস্ট সিরিজ জয়ের খরা কাটানোর মিশনে নামছে। এই সিরিজে ভারতের বোলিং আক্রমণ (Indian Pacers) তাদের প্রধান অস্ত্র হতে চলেছে। বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল জানিয়েছেন, প্রথম টেস্টে ভারতের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত এই সিরিজে ভারতের সাফল্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারতের পেস আক্রমণ: শক্তি ও চ্যালেঞ্জ
জসপ্রীত বুমরাহ ভারতের বোলিং আক্রমণের মূল স্তম্ভ। তার গতি, নির্ভুলতা এবং ইয়র্কার ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য সবসময়ই হুমকি। তবে, পিঠের চোটের কারণে তিনি পুরো সিরিজে খেলতে পারবেন না। মর্কেল জানিয়েছেন, বুমরাহ সম্ভবত তিনটি টেস্টে অংশ নেবেন, যা দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মহম্মদ সিরাজ, যিনি ২০২১ সালে লর্ডসে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, বর্তমানে ফর্মে ফিরতে লড়াই করছেন। তবুও, তার অভিজ্ঞতা এবং আগ্রাসী মানসিকতা দলের জন্য মূল্যবান। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, তৃতীয় পেসার হিসেবে, ইংল্যান্ডের স্যুইং ও সিম কন্ডিশনে কার্যকর হতে পারেন। তার উচ্চতা এবং বলের লেটারাল মুভমেন্ট ইংলিশ ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারে।
বিশ্বকাপের লক্ষ্যে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হারমানপ্রীতরা
ব্যাকআপ পেসার হিসেবে আকাশ দীপ এবং অর্শদীপ সিং রয়েছেন। আকাশ দীপের বোলিং স্টাইল শামির মতো, যিনি স্যুইং এবং সিমের মাধ্যমে উইকেট নিতে পারেন। অন্যদিকে, বামহাতি পেসার অর্শদীপ আক্রমণে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে নিতিশ কুমার রেডি এবং শার্দুল ঠাকুরও দলের গভীরতা বাড়াচ্ছেন। এই বৈচিত্র্য ভারতকে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন কন্ডিশন মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
কুলদীপ যাদব: স্পিনের এক্স-ফ্যাক্টর
ভারতের স্পিন বিভাগে কুলদীপ যাদব ( Kuldeep Yadav) হতে পারেন গেম-চেঞ্জার। ২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেছেন যে তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং লাইনআপের জন্য হুমকি। মর্কেলের মতে, কুলদীপের রিস্ট-স্পিন এবং ফ্লাইটেড ডেলিভারি ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ শৈলীর বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। তবে, পিচের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে ভারত এক বা দুই স্পিনার খেলাতে পারে। রবীন্দ্র জাদেজা, যিনি ব্যাটে অবদান রাখতে পারেন, দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে কুলদীপের সঙ্গী হতে পারেন। ওয়াশিংটন সুন্দরও একটি বিকল্প, তবে কুলদীপের বৈচিত্র তাকে এগিয়ে রাখছে।
ইংল্যান্ডের কন্ডিশন ও কৌশল
ইংল্যান্ডের বর্তমান কন্ডিশনে পেস বোলিংয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মর্কেল জানিয়েছেন, পিচ এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে বোলারদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ইংল্যান্ডের পিচগুলো গত কয়েক বছরে ব্যাটিং-বান্ধব হয়েছে, যা স্যুইং এবং সিম কমিয়ে দেয়। তবে, ওভারকাস্ট আবহাওয়ায় বল বাতাসে ঘুরতে পারে, যা ভারতের পেসারদের জন্য সুযোগ। ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শৈলী ‘বাজবল’ মোকাবেলায় ভারতীয় বোলারদের প্রথম দিন থেকেই শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। মর্কেল জোর দিয়েছেন যে টেস্ট ফিটনেস এবং ধৈর্য এই সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে যেহেতু বেশিরভাগ বোলার দীর্ঘদিন ধরে রেড-বল ক্রিকেট খেলেননি।
সম্ভাব্য বোলিং কম্বিনেশন
প্রথম টেস্টের জন্য ভারতের সম্ভাব্য বোলিং লাইনআপ হতে পারে:
চার পেসার, এক স্পিনার: জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, আকাশ দীপ, কুলদীপ যাদব।
তিন পেসার, দুই স্পিনার: জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা।
পিচের কন্ডিশন এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি পিচ পেস-সহায়ক হয়, তবে চার পেসারের কম্বিনেশন বেশি সম্ভাবনাময়।
ইংল্যান্ডের দুর্বলতা ও ভারতের সুযোগ
ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ এবার তুলনামূলকভাবে দুর্বল। জফ্রা আর্চার, মার্ক উড এবং গাস অ্যাটকিনসনের অনুপস্থিতিতে তাদের তরুণ বোলারদের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটি ভারতের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে, ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং লাইনআপ, যারা ‘বাজবল’ শৈলীতে খেলে, ভারতীয় বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জ। জ্যাক ক্রলি, বেন স্টোকস এবং জো রুটের মতো ব্যাটারদের আটকানোর জন্য বুমরাহ এবং কুলদীপের মতো বোলারদের উপর বড় দায়িত্ব থাকবে।
ভারতের বোলিং আক্রমণ এই সিরিজে তাদের প্রধান শক্তি। বুমরাহ, সিরাজ, প্রসিদ্ধ এবং কুলদীপের মতো বোলাররা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে চাপে রাখতে পারেন। তবে, সঠিক বোলিং কম্বিনেশন এবং কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এই সিরিজের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লিডসে প্রথম টেস্টে ভারত যদি শক্তিশালী শুরু করতে পারে, তবে ১৮ বছরের খরা কাটানোর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন এই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের জন্য।