সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির (Siliguri) ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগর ভীমবার এলাকায় শুক্রবার (৬ জুন, ২০২৫) এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম শঙ্কর পাল (৫৪), যিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা ছিলেন। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে শোক এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে শঙ্কর পালের মেয়ে তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত একটি গুদাম ঘরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। মৃতদেহ দেখেই তিনি চিৎকার শুরু করেন, যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিধাননগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়।
এই ঘটনায় পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ফাঁসিদেওয়া থানার তদন্তকারী দল ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এখনও মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হয়নি। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এই ঘটনা এলাকায় তীব্র শোক ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। শঙ্কর পালের পরিবারের সদস্যরা এবং প্রতিবেশীরা এই অকাল মৃত্যুতে মর্মাহত। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল বলেন, “শঙ্করদা খুব শান্ত ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। এমন ঘটনা কেউ ভাবতেও পারেনি। আমরা চাই পুলিশ এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করুক।” এলাকার অনেকে এই ঘটনাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন, তবে পুলিশ এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি।
এই ঘটনা বিধাননগরে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) একই এলাকায় বাঁশ চুরির অভিযোগে মঙ্গল টুডু নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের পর তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর মঙ্গলের মৃত্যু নিয়েও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, এবং একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শঙ্কর পালের মৃত্যুর ঘটনা এই এলাকায় টানা দুই দিনের মধ্যে দ্বিতীয় মর্মান্তিক ঘটনা, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা সমাজে মানসিক চাপ, সামাজিক অস্থিরতা এবং সচেতনতার অভাবের ইঙ্গিত দেয়। স্থানীয় সমাজকর্মী মীনা দাস বলেন, “আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। অনেক সময় পরিবার বা সমাজের চাপে এমন ঘটনা ঘটে, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এলাকায় কাউন্সেলিং এবং সমর্থন কেন্দ্র স্থাপন করা।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা শঙ্কর পালের মৃত্যুর পেছনের কারণ উদঘাটনের জন্য সকল দিক তদন্ত করছে। শঙ্করের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এবং তাঁর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়ে গুজব এড়াতে পুলিশ স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।