আগুন নেভাতে গিয়ে বিচারপতির বাড়িতেই টাকার পাহাড়! সুপ্রিম-কড়া পদক্ষেপ

সম্প্রতি দিল্লি হাই কোর্টের (High Court) বিচারপতির বাড়িতেই টাকার পাহাড়! সুপ্রিম কোর্টের কড়া পদক্ষেপএক বিচারপতির বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে, যা…

Unaccounted Cash Recovered from the House of Delhi High Court Judge, Supreme Court Takes Action

সম্প্রতি দিল্লি হাই কোর্টের (High Court) বিচারপতির বাড়িতেই টাকার পাহাড়! সুপ্রিম কোর্টের কড়া পদক্ষেপএক বিচারপতির বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই টাকার কোনও আইনসম্মত বা বৈধ হিসাব দিতে পারেননি।

এমনকি টাকার উৎস ও পরিমাণের কোনও ব্যাখ্যাও তাঁরা প্রদান করেননি। ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে, যখন দোলের ছুটির সময়ে দিল্লি হাই কোর্টের (High Court) বিচারপতি বর্মার সরকারি বাংলোয় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দমকল বাহিনী যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, তখন তারা বিচারপতির বাড়ির ভিতরে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা দেখতে পায়। পরে দমকল কর্মীরা এই বিষয়ে পুলিশকে অবগত করেন এবং তদন্ত শুরু হয়।

   

যতটুকু জানা গেছে, বিচারপতির পরিবারও এই টাকার বিষয়ে কোনও পরিষ্কার উত্তর দিতে পারেনি। তাদের কাছ থেকে কোনও উপযুক্ত ব্যাখ্যা না পাওয়ার পর, পরবর্তী সময়ে বিচারপতির কাছেও এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ হয় এবং তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরে। বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসের ওপর এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিচারপতি বর্মাকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কিছু সদস্য আরও কঠোর শাস্তির পক্ষে ছিলেন এবং তাদের মতামত ছিল যে, এর থেকে আরও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

তবে আপাতত, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খন্না বিচারপতি বর্মাকে দিল্লি হাই কোর্ট (High Court) থেকে আবার ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলি করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন। এই সিদ্ধান্তটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারব্যবস্থা অনুসারে ছিল, যেখানে বিচারপতি বর্মাকে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য আপত্তি জানানো হয়নি।

এছাড়া, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, কোনও হাই কোর্টের বিচারপতির কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, অথবা তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আগে তার কাছ থেকে উত্তর প্রার্থনা করেন। যদি প্রধান বিচারপতি তার জবাবের প্রতি সন্তুষ্ট না হন, তবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি সদস্য এবং দু’টি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অন্তর্ভুক্ত থাকেন। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি শাস্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তবে বিচারপতিকে পদত্যাগ করার জন্য বলা হয়। যদি তিনি পদত্যাগে রাজি না হন, তাহলে সংসদের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের জন্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়।

ভারতের বিচার ব্যবস্থা সবসময়ই জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। একটি বিচারপতির দ্বারা এমন একটি ঘটনা ঘটানো কেবল তার ব্যক্তিগত চরিত্রের ওপরই প্রশ্ন তোলেনি, বরং পুরো বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সুতরাং, এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা অটুট থাকে।