নগর জীবনের দ্রুততর ছুটে চলা, কংক্রিটের জঙ্গল আর গরমের দাবদাহের মধ্যে প্রায়ই আমাদের মন হাঁফিয়ে ওঠে। শরীর তো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু মনের অবস্থা আরও খারাপ। একরাশ সবুজের (Green Sanctuary) মাঝে কিছুটা প্রশান্তি খোঁজার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। এই আবেগের সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হয় নগরবাসীর সেই ইচ্ছা, যেখানে ইট-কাঠের বাঁধা থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। প্রায় এক দশক আগে কলকাতার নিউটাউনে ইকো পার্কের উদ্ভব হয়েছিল, যা মাত্র কিছুদিনের মধ্যে শহরের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণস্থলে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এখন শুধু নিউটাউনই নয়, কলকাতা (Kolkata) লাগোয়া শহরতলির মধ্যমগ্রামে দ্বিতীয় ইকো পার্ক (Second Eco Park) তৈরির কাজ চলছে।
মধ্যমগ্রামের ইকো পার্কের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল প্রায় ৫ বছর আগে। তবে, তৎকালীন পুরসভা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের উদ্যোগে পরিকল্পনাটি এগিয়ে চলেছে। তিনি একটি বড় প্রকল্প হিসেবে এই পার্কটি তৈরি করার চিন্তা করেছিলেন, যাতে সারা বছর পরিবেশ সচেতনতায় প্রভাব পড়বে। এই ইকো পার্কের জন্য পুরসভা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পানিহারা এলাকায় ১০ একর জমি চিহ্নিত করে। তখনই শুরু হয়েছিল প্রোজেক্ট প্ল্যানিং। কিন্তু কিছু কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছিল। বিশেষ করে, অর্থের জটিলতা এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, সম্প্রতি এই সমস্যা মিটে যাওয়ায়, কেএমডিএ-র সহায়তায় খুব দ্রুত গতিতে কাজ শুরু হয়েছে।
এই ইকো পার্কে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখানে থাকবে একটি বড় জলাশয়, যেখানে দর্শনার্থীরা বোটিং করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই জলাশয়ের পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে, এবং সেই সঙ্গে গাছ লাগানোর কাজও চলছে। জলাশয়ের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য একটি অত্যন্ত সুন্দর সেতু তৈরি করা হবে। এই সেতুটি পার্কের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এছাড়া, এই ইকো পার্কে একাধিক দুষ্প্রাপ্য গাছের সংগ্রহ থাকবে। ফুলের বাগান, খেলার মাঠ, এবং আধুনিক লাইট অ্যান্ড সাউন্ড ফোয়ারাও থাকবে। প্রবীণদের জন্য বিশেষ হাঁটার পথ এবং বসার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে তারা শান্তির মাঝে সময় কাটাতে পারেন। পার্কের ভিতরে একটি ফুড কোর্টও থাকবে, যেখানে দর্শনার্থীরা খাবারের উপভোগ করতে পারবেন। সম্পূর্ণ পার্কের বাইরের বাউন্ডারি ওয়ালও নির্মিত হচ্ছে, যাতে পার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
মধ্যমগ্রামের ইকো পার্কটি পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতার প্রমাণস্বরূপ একটি মাইলফলক হতে পারে। এটি শুধু শহরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি নয়, বরং তা স্থানীয় বাসিন্দাদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে। আশা করা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে পার্কটি উদ্বোধন হলে, এটি নতুন এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গণনা হতে শুরু করবে।
এছাড়া, এটি সহজেই পৌঁছনো যায়, কারণ মধ্যমগ্রাম বা হৃদয়পুর রেল স্টেশন থেকে সোজা পার্কে যাওয়া যাবে। ব্যারাকপুর বা সোদপুর থেকেও নীলগঞ্জ অথবা সাজিরহাট হয়ে পার্কে আসা সম্ভব। এই নতুন ইকো পার্কটি শুধু এক টুকরো সবুজের আবাসস্থলই নয়, বরং শহরবাসীর জন্য এক অতিরিক্ত প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠবে, যেখানে তারা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন।