অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের পবিত্র পরিসরে বুধবার সকালে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে, যেখানে শিরোমণি আকালি দল (SAD)-এর প্রবীণ নেতা এবং পাঞ্জাবের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদলের (sukhbir singh badal) ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি তখন ‘শাস্তিমূলক’ ডিউটি পালন করছিলেন, যার মধ্যে তাকে মন্দিরের সুরক্ষা প্রহরায় বসানো হয়েছিল। এই ঘটনার পর, আতঙ্কিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও, পুলিশের তৎপরতায় ঘটনা অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
বুধবার সকালে, সুখবীর সিং বাদল (sukhbir singh badal) মন্দিরে তার নিয়মিত ডিউটি পালন করছিলেন। তিনি তখন শাস্তি হিসেবে প্রহরায় বসেছিলেন, যেখানে তাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই সময়েই নরেন সিং চৌরা নামের এক ব্যক্তি, যিনি এখন নিষ্ক্রিয় খালিস্তান মুক্তি সেনা (Khalistan Liberation Army) দলের সদস্য হিসেবে পরিচিত, তার কাছে একটি পিস্তল ছিল। সে সুখবীর সিং বদালের দিকে লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা করেছিল। তবে, পুলিশ কনস্টেবল যিনি বদালের সাথে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তার তৎপরতায় চৌরাকে শক্ত হাতে আটক করা হয় এবং গুলি আকাশে চলে যায়, যা বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
চৌরার পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও তার গ্রেপ্তারি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে। নরেন সিং চৌরা, যিনি পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার ডেরা বাবা নানক এলাকার বাসিন্দা, তিনি ২০০৪ সালে একটি অস্ত্র আইনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পর থেকে, চৌরা বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেমন দাল খালসা ও অন্যান্য সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
এই ঘটনার পর, চৌরার নিরাপত্তা বাহিনী ও সুরক্ষিত অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে, পুলিশ জানিয়েছেন যে চৌরার লক্ষ্য ছিল একমাত্র সুখবীর সিং বদাল। তবে তার অপ্রত্যাশিত আক্রমণ দ্রুত থামানো সম্ভব হয়।
সুখবীর সিং বাদল একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, যিনি শিরোমণি আকালি দল (SAD)-এর সভাপতিও। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তাকে সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। সুখবীর সিং বাদলকে জেড-প্লাস নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তার চারপাশে সশস্ত্র পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা অবস্থান নেন। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও, চৌরার আক্রমণ থেকে তাকে রক্ষা করতে কিছুটা সময় নিয়েছিল পুলিশ, তবে তার তৎপরতায় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
চৌরা, যিনি বর্তমানে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত, তার এই আক্রমণের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, তার এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করছিলেন। এই ঘটনার সাথে অমিত শাহ বা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা আবার শুরু হয়েছে।
পাঞ্জাব রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে। এর মধ্যে, খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলির অস্তিত্ব পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হওয়া, এই ধরনের আক্রমণের পেছনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে, পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা এবং চৌরার দ্রুত গ্রেপ্তারি এই ঘটনায় অনেকাংশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে। ইতিমধ্যে, পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে ঘটে যাওয়া এই গুলি চালানোর চেষ্টা একটি বড় রাজনৈতিক আক্রমণের চেষ্টার অংশ ছিল, তবে পুলিশের তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনার পর, পাঞ্জাবের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সুখবীর সিং বদাল ও তার দলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার জন্য কোন বিশিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি একটি উদ্বেগজনক সংকেত যা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।